বরিশাল ৩রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪২ হিজরি
এমপিওভুক্তি ঘোষণা পর পেরিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন মাস। এর মধ্যে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। এমপিওভুক্তির আওতায় আসা ২ হাজার ৭৩৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ অসত্য তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশোধিত গেজেট প্রকাশে আরো কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর শুরু হবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ। সেখানেও ব্যয় হবে কয়েক মাস। সে হিসেবে আগামী জুনের আগে শিক্ষক এমপিওভুক্ত নিয়ে এক প্রকার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে যদি জুনের পর কিছু সময় পেরিয়ে যায় তাতে এ অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে। আর এর ফলে এমপিওভুক্তির খাতে বরাদ্দ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত চলে যাবে। এতে বঞ্চিত হবেন সারাদেশের সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশীদ আমিন বলেন, নতুন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির এক বছরের টাকা আমাদের হাতে রয়েছে। আগামী সংশোধিত বাজেটের আগেই এই অর্থ শিক্ষকদের দিতে হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী মার্চের মধ্যেই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সংশোধিত গেজেট প্রকাশের চিন্তা করছি। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এমপিওভুক্তির ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে সময় বেশি সময় লাগলে ‘বিকল্প’ ভাবা হবে। শিক্ষকরা গত জুলাই মাস থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পাবেন। বর্তমানে যে সফটওয়্যার রয়েছে, তা ব্যবহারের মাধ্যমে বকেয়া বেতন-ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে সফটওয়্যারের নতুন তথ্য সংযোজনের কথাও জানান তিনি।
এবার এমপিওভুক্তি আবেদন গ্রহণ, সফটওয়্যার তৈরিসহ নানা ক্ষেত্রে নানা অব্যবস্থাপনা ছিলো। যে কারণেই কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব কোড যদি সৃষ্টি করা সম্ভব না হয়, তাহলে মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের অঙ্ক নির্ধারণ করা কঠিন হবে।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক তথ্য, পাসের হার, শিক্ষার্থী সংখ্যা- সবকিছু যাচাই করতে হয়েছে। এ কাজে সাড়ে তিন মাস খুব বেশি সময় নয়। বাছাই শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়া হবে। বাছাইকালে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসত্য তথ্য সরবরাহের প্রমাণ মিলেছে বলেও মহাপরিচালক জানান। তবে এর সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠানের কোড সৃষ্টি করা হয় প্রতি বেজোড় মাসের এমপিও কমিটির কেন্দ্রীয় বৈঠকে। সেই হিসাবে সামনে বেজোড় মাস আছে মার্চ এবং মে। যদি আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব হয় এবং অন্যান্য কাজ ঠিকঠাক মতো চলে তবে মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানগুলো কোড নম্বর পাবে, যে কোডে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর অর্থ যাবে। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৯ বছর পর সরকার ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে।
এর আগে ২০১০ সালে একসঙ্গে ১ হাজার ৬২৬টি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিও দেয়া হয়। এমপিওভুক্ত ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬৫১টি, বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসা ১ হাজার ৭৯টি। নতুন এই এমপিওভুক্তির কারণে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে মোট ৮৮১ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে।