বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার বামনা উপজেলায় এক আতঙ্কের জনপদের নাম ডৌয়াতলা। এমন কোন মাস নেই যে মাসে এই ইউনিয়নের কোথাও কোন অঘটন না ঘটে। এখানে ঘটে যাওয়া সকল অঘটনের মূলে রয়েছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। ফিটিং, মারপিট, ছিনতাই, জমি দখল, হুমকী, ইভটিজিং এমন কোন কাজ নেই যে কাজের সাথে এই ইউনিয়নের কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা জড়িত থাকে না।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এ ইউনিয়নে বর্তমান বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা ও ডৌয়াতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের আলাদা আলাদা দুটি গ্রুপ রয়েছে। যারা বেশ কিছু দিন ধরে পরষ্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। আর এ উভয় গ্রুপেরই রয়েছে ৩০-৪০ সদস্যের কিশোর বাহিনী। এদের একাংশ মাদক, ইভিটিজিংসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মেও সাথে জড়িত। এই কিশোর অপরাধীরা বিভিন্ন সময়ে গুরুতর অপরাধ করেও ওই নেতাদের আশির্বাদে পার পেয়ে যায়। ফলে এখানে দিন দিন বেড়ে চলেছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা।
সম্প্রতি গত রবিবার সন্ধ্যায় ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিন পাশে এক গ্রুপের কিশোর গ্যাং লিডার মো. অলি আহম্মেদ নামে একজন বখাটে বামনা উপজেলা ফার্মাসিস্ট রিপ্রেনজেটিভ এ্যাসোসিয়েশনের (ফরিয়া) সভাপতি মো. মেজবাহ উদ্দিনের চলন্ত মটরসাইকেলে ছুরি নিক্ষেপ করে। পরে ওই ছুরিটি সেই বিক্রয় প্রতিনিধি নিজেই ফেলেছেন দাবী করে তার কাছে থাকা নিজের মটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেন। কিছুক্ষনের মধ্যে প্রায় ২০-২৫জন গ্যাং সদস্য এসে তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় মহাসড়ক থেকে যাচ্ছিলেন বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার। তাকে দেখে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি ডাক চিৎকার দিলে তিনি ঘটনাস্থলে আসলে এই গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মটরসাইকেলের চাবি ফেরত দিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, কিশোর গ্যাং লিডার অলি আহম্মেদ কয়েকবার ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছারাও এর শ্বশুর মো. সগির খান কুখ্যাত মাদক বিক্রেতা যিনি বর্তমানে এক ডাকাতি মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন।
ঘটনার শিকার ফারিয়া সভাপতি মো. মেজবাহ উদ্দিন জানায়, তার মটরসাইকেলে ছুরি নিক্ষেপ করে তাকে ফিটিং করার চেষ্টা চালাচ্ছিল ওই গ্যাং লিডার অলি আহম্মেদ। অলি প্রথমে তার মটরসাইকেল থেকে কেন ছুরিটি পড়লো? এ বিষয়ে চার্জ করেন এবং তার হাতে থাকা মটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেন। ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে উজ্জল মৃধাসহ আরো ২০-২৫জন মটরসাইকেল যোগে সেখানে এসে হাজির হয় ও তাকে ঘিরে ফেলে। বামনা উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওই পথ দিয়ে না গেলে তার সাথে থাকা সর্বস্ব এই গ্যাং বাহিনী হাতিয়ে নিয়ে যেতো।
বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার বলেন, আমি বোনের বাড়ি থেকে তখন ফিরছিলাম। মেজবাহর ডাকে আমি সেখানে গিয়ে দেখি কিছু উঠতি বয়সী কিশোর ছেলেরা মেজবাহকে ঘিরে রেখেছে। আমি ধমক দেওয়ার পরে তারা চলে যায়। তবে তাদের আমি চিনতে পারি নাই। পরে মেজবাহকে নিয়ে আমি বামনায় চলে আসি।
ফারিয়া’র নেতৃবৃন্দ এ ঘটনাটি বামনা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমানকে জানালে তিনি তাদেরকে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধার নেতৃত্বে সালিশ ব্যবস্থায় নিষ্পত্তির জন্য বলেন।
ঘটনাটি বামনা উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক মনোতোষ হাওলাদার নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট দিলে ওই কিশোর গ্যাং লিডার অলি আহম্মেদ তার স্ত্রীর সৃষ্টি খান নামে ফেসবুক আইডি থেকে ম্যাাসেঞ্জারে কল করে ডৌয়াতলায় পেলে মেরে ফেলার হুমকী দেন। এঘটনায় সোমবার দুপরে বামনা থানায় ওই সাংবাদিক প্রাণ নাশের অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরীসহ বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইন শৃংখলা সভায় সকল কে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গত রবিবার রাতে ঔষধ কম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কিশোর গ্যাং সদস্যরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা আমরা কেউ কখনো কল্পনা করতে পারিনি। এই ঘটনার সাথে জড়িত গ্যাং গ্রুপ লিডারের স্ত্রী ঘটনার পর মোবাইলে কল দিয়ে আমার সাথে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এ ইউনিয়নে বড় কোন ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।
বামনা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি রাতেই ঘটনাটি জেনেছি। বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা রবিবারের ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে শালিশ মিমাংসার মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। যদি সেভাবে সুরাহা না হয় তাহলে ওই গ্যাং গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, ডৌয়াতলায় কোন গ্যাং গ্রুপের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে দেওয়া যাবেনা। এই গ্রুপ গুলোর নিমূর্ল করতে হবে।