বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
ডেস্ক রিপোর্ট \ কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার হঠাৎ রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। যেখানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। খবর যুগান্তর
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষেও কর্মসূচি দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বার্তা দিয়েছে দলটি। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর করে এ বার্তা দেন। ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে হাইকমান্ডের নির্দেশনাও পৌঁছে দেয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে টানা কোনো কর্মসূচি, ঘেরাও অথবা সারা দেশে একযোগে মিছিল বা সমাবেশ কর্মসূচি আসতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বৈঠকে এক নীতিনির্ধারক বলেন, তৃণমূল মনে করে, সরকার খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে না, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। আমরা সভা-সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সবকিছু করছি, করব বলে বক্তব্য দেই, বাস্তবে কিছুই করছি না। যা নিয়ে তৃণমূলে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বার্তা পৌঁছে দিতে বিএনপির সাংগঠনিক জেলাগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেব অধিকাংশ জেলাও সফর করেছেন বিএনপির নেতারা। শনিবার একযোগে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বরিশাল, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহী, ড. আবদুল মঈন খান খুলনা, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম, বেগম সেলিমা রহমান ময়মনসিংহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া দিনাজপুর, আমানউল্লাহ আমান কুমিল্লা, আবদুল হাই মুন্সীগঞ্জ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নোয়াখালী, বরকতউল্লাহ বুলু রংপুর, মোহাম্মদ শাহজাহান সিলেট, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফর করেন।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, কাল বৃহস্পতিবার জামি?ন আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানির তারিখ ঠিক হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, নানা আইনি মারপ্যাঁচে জামিন আবেদন আরও কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। যদি শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগেও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন চূড়ান্তভাবে নাকচ হয়, তাহলে বিএনপির কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। কেন্দ্র থেকে যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে আমরা তা সফল করব। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, নেত্রীর মুক্তির জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি চাচ্ছেন। তারা অপেক্ষায় আছেন কেন্দ্রীয় নির্দেশনার। যে কোনো কর্মসূচি সফলে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছি।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আন্দোলনে নামার আগে দলের নীতিনির্ধারকরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবছেন। এর একটি ভবিষ্যতে সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতির অপেক্ষা না করা।
এ ক্ষেত্রে কর্মসূচির জন্য অনুমতির আবেদন না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। অন্যটি হচ্ছে, হয়রানির প্রতিবাদ হিসেবে সারা দেশে পুলিশের দায়ের করা ‘গায়েবি’ মামলায় একযোগে আদালতে হাজিরা না দেয়া।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সারা দেশের কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকায় ২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর সমাবেশ করার পরিকল্পনা দলটির। তবে এ কর্মসূচি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নাকি বিএনপির ব্যানারে হবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিএনপির বেশিরভাগ নেতা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে কর্মসূচি পালনে আপত্তি জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও কর্মসূচি ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হলে তাতে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। শেষ পর্যন্ত বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি বিএনপির ব্যানারে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে জানা গেছে।