আকাশে উড়া হল না বরিশালের কন্যা টুম্পার

  • আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ০১ ২০১৯, ০০:৩৮
  • 1055 বার পঠিত
আকাশে উড়া হল না বরিশালের কন্যা টুম্পার
সংবাদটি শেয়ার করুন....

কানিজ ফাতেমা টুম্পা। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন ছিল কেবিন ক্রু হবেন। ডানা মেলে আকাশে উড়বেন। দেখেছেন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। মাকে কথা দিয়েছিলেন সুন্দর একটি ফ্ল্যাট কিনে দেবেন। যেখানে পুত্রহীন বাবা-মা শেষ জীবনটা স্বাচ্ছন্দে কাটাবেন। কিন্তু টুম্পার সেই অধরা স্বপ্নকে একটি অপ্রত্যাশিত ছুরিকাঘাত নিমিশেই শেষ করে দিয়েছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে টুম্পার বোন আয়শা বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার মধ্য কাটাদিয়া এলাকায়। কুড়িলে আমরা ভাড়া বাসায় থাকি। কুড়িল চৌরাস্তা এলাকায় টুম্পার স্বামী সাফকাতদের নিজের বাড়ি। তার মা পৈত্রিক সূত্রে ওই বাড়ি পেয়েছেন। কম শিক্ষিত ও বেকার সাফকাত সেই বাড়ি দেখাশোনা করেন। বাড়ির ভাড়া তোলেন। সেই টাকায় নেশা করেন। ওই বাড়ির পাশের বাসায় আমরা ভাড়া থাকি। সাফকাতের মামাতো বোনকে প্রাইভেট পড়াতেন টুম্পা। সেই সুবাদে টুম্পা ও সাফকাতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘ নয় বছর ধরে চলছিল তাদের এ সম্পর্ক। আব্বুর কড়া নিষেধ থাকা স্বত্বেও লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান আপু। দুই মাস আগে একদিন রাতে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন তারা।

বিয়ের পরে আব্বু তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপুকে বাসায় নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পরেই সাফকাত বেঁকে বসেন। টুম্পাকে পরিবারের অমতে নিজের বাসায় নিয়ে যান। কিছুদিন পর থেকেই নানা সমস্যা শুরু হয়। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন নেশাগ্রস্ত সাফকাত। হঠাৎ একদিন রাত আড়াইটায় আপু আমাকে ফোন দিয়ে তাকে নিয়ে আসতে বলেন। রাতে বাসায় গিয়ে দেখি আপু ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে আছেন। এসময় বাথরুম থেকে বের হলে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে লোহার রড দিয়ে মারতে উদ্যত হন সাফকাত। এর সপ্তাহ খানেক পরে পুনরায় গায়ে হাত তুললে আমাদের বাসায় চলে আসেন টুম্পা। উকিলের মাধ্যমে সাফকাতকে তালাকের নোটিশ পাঠান। তালাকের নোটিশ হাতে পেয়ে টুম্পাকে বাসায় ফিরিয়ে নিতে পুনরায় দেনদরবার করেন সাফকাত। এসময় তাদের উকিল বাবা ও পরিবারের লোকদের সমন্বয়ে টুম্পাকে বাসায় ফিরিয়ে নেন তার ঘাতক স্বামী। শেষবার আপু যখন বাসায় আসেন তখন আমাকে বলেছিলেন, আয়শা আমি কেবিন ক্রুতে ভর্তি হবো তুই ভালোভাবে একটু খোঁজ খবর করে আমাকে জানাবে।

টুম্পার মা বলেন, সপ্তাহখানেক আগে টুম্পাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হাত পা বেধে রাখে সাফকাত। এসময় মেয়েকে বাসায় আনতে গিয়ে ফেরত আসি। টুম্পা চেতনা ফিরে পেয়ে আমাদের ফোন করে বলে, মা আমার হাত পা অবস হয়ে আসছে। আমাকে এসে নিয়ে যাও। পরবর্তীতে আমি আর আমার বোন মিলে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। ও একা হাঁটতে পারছিল না। আমরা দু বোন তাকে ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে আসছি। এসময় পথে কুড়িল চৌরাস্তা এলাকায় সাফকাত হঠাৎ এসে টুম্পাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। আমরা চিৎকার দিলে চারপাশের লোকজন এসে ওকে ধরে ফেলে। কিন্তু স্থানীয় কিছু দোকানদার এসে বলে সে এলাকার ছেলে। ওকে ছেড়ে দিন। পরবর্তীতে সে পালিয়ে যায়। এসময় আমরা টুম্পাকে নিয়ে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে যাই। অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে আসি। শুক্রবার রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। সে মারা যাওয়ার আগে আইসিইউতে বলেছে, মা আমার পা বাঁধা কেন। পায়ের বাঁধন খুলে দাও। আমার শরীর খুব ব্যথা। টুম্পার মা বলেন, আমার কোনো ছেলে ছিল না। তিন মেয়েকে নিয়েই ছিল আমার সুখের সংসার। টুম্পা ছিল আমার সবচেয়ে আদরের। ওকে ছাড়া আমি সকালের চা পর্যন্ত খেতাম না। আমি কখনও মুখ ভার করে থাকলে বলতো, ‘মা তোমার ছেলে নেই বলে চিন্তা করছো কেন। আমি পড়ালেখা শেষ করে কেবিন ক্রু হবো। তোমাকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিবো। যেখানে বাবাকে নিয়ে তুমি থাকবে’। বিলাপ করে তার মা বলেন, ভাড়াটিয়া বলে আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাবে না। দেশে কি কোনো আইন নেই। আমার মেয়ের খুনের বিচার চাই। সাফকাতের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

টুম্পার বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আমি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। অনেক কষ্ট করে তিন মেয়েকে মানুষ করেছি। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে টুম্পা এক সপ্তাহ আগে আমাদের বাসায় ফিরে আসে। সাফকাত গত বুধবার তাকে ফোন করে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার মা ও খালা তার খোঁজে গেলে তারা অনেকটা নিস্তেজ অবস্থায় পান টুম্পাকে। টুম্পা তখন মা ও খালাকে জানায়, কফির সঙ্গে কিছু একটা মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়েছে। এরপর তার মা ও খালা মিলে তাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলেন। এরপরতো সব শেষ হয়ে গেছে। আমার মেয়ে হত্যাকারির ফাঁসি চাই। মানব জমিন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে সরকার, হাইকোর্ভোলায় কোটাবিরোধীদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল তির-ধনুক দিয়ে বিবিসি সাংবাদিকের স্ত্রীসহ দুইবদলে যাওয়া পরীমনি১০ জনের দল নিয়ে উরুগুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে কলমসংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনটিআরসিএশিক্ষার্থীরা বোধহয় সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেনজেলেদের চাল আত্মসাতের বিচার দাবিতে মানববন্ধবরিশালে পুলিশের বাঁধা ডিঙিয়ে মহাসড়ক অবরোধ শিপুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে সতর্কতার অনুরোধঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মের ছুটি কমল, শনিবাপ্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভারত যাচ্ছেনওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে সুপার এইট শুরু ইংল্যদক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়াই করে হারলো যুক্তরা
%d