শত কোটি টাকা মুনাফার পরও

বরিশাল-খুলনাসহ ২১ জেলায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ওজোপাডিকো’র

  • আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ০৪ ২০১৯, ১৩:৫৮
  • 955 বার পঠিত
বরিশাল-খুলনাসহ ২১ জেলায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ওজোপাডিকো’র
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গত অর্থবছরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) শত কোটি টাকার ওপরে মুনাফা করেছে। তারপরও কোম্পানিটি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে বরিশাল-খুলনাসহ ২১ জেলায় বিদ্যুৎতের দাম বাড়বে। অন্যদিকে কোম্পানিটির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকরা। গতকাল টিসিবি অডিটোরিয়ামে বিকালে ওজোপাডিকো’র বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে অংশ নিয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদসহ ভোক্তারা এ বিরোধীতা করেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই গণশুনানির আয়োজন করেছে।
গণশুনানির শেষ দিনে ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন প্রস্তাবে বলেন, জানুয়ারি-ডিসেম্বও ২০২০ সময়কালে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে বিতরণ ব্যয় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১ দশমিক ৪০ টাকা। ওজোপাডিকো তার জন্য প্রযোজ্য বিতরণ রেট বর্তমানের ১ দশমিক ২২টাকা হতে শূন্য দশমিক ১৮ টাকা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছে। বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, বিদ্যমান পাইকারি, সঞ্চালন এবং খুচরা মূল্যহারে ওজোপাডিকো’র রাজস্ব ঘাটতি নেই। বিদ্যুতের পাইকারি এবং সঞ্চালন পরিবর্তন করা হলে পরিবর্তিত পাইকারি এবং সঞ্চালন মূল্যহারের ভিত্তিতে ওজোপাডিকো’র জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২০ সময়কালের বৈদ্যুতিক এনার্জি রেট নির্ধারিত হবে, যা ওজোপাডিকো’র বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহারে পাস-থ্রু হবে।
ক্যাব’র জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম শুনানিতে বলেন, ওজোপাডিকো লাভে আছে। কর্পোরেট টেক্সও দিয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। সুতরাং দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক। শুনানির শেষ দিনে তিনি আরো বলেন, শুনানিতে পেশকৃত বিবেচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে তথ্য অধিকার আইন ও মানবাধিকার আইন বিবেচনায় নিতে হবে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ ক্রয়ে প্রদত্ত ক্যাপাসিটি চার্জ মূল্যহারে সমন্বয়ে আপত্তি রয়েছে ক্যাব’র। উৎপাদনে বিদ্যমান ঘাটতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। সে ঘাটতি সমন্বয়ে মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব। উৎপাদন ব্যয় ও ব্যয় বৃদ্ধিতে ঘাটতি বিধায় যে ব্যয় ও ব্যয় বৃদ্ধির ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা গণশুাননিতে প্রমাণিত হয়নি বলে এই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওজোপাডিকো পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, কোম্পানিটি লাভে থেকেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যা কোনো ক্রমেই মানা যায় না। এদিকে একই স্থানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) প্রস্তাবে বলেছে, জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২০ সময়কালে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে বিতরণ ব্যয় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১ দশমিক ৫১ টাকা। ২০১৭ সালের কমিশন কর্তৃক জারিকৃত মূল্যহার আদেশ মোতাবেক আরইবি’র বিতরণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ দশমিক ৬৩ টাকা। আরইবি বলেছে, পাইকারি বিদ্যুতের ক্রয়ের মূল্যহার বৃদ্ধি করা হলে আরইবি’র আওতাধীন পল্লী বিদ্যুতের সমিতিগুলোর খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্যহার বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে।
আরইবি প্রস্তাবিত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বিইআরসি। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর মোবাইল অপারেটর অব বাংলাদেশ (এমটব) এর পক্ষ থেকে বলা হয়, দুর্যোগের পর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল সেবা প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এরপরই বিইআরসি এই অনুরোধ জানায় শুনানিতে। অপারেটর রবির প্রতিনিধি অনামিকা ভদ্র বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলেও ব্যাটারি দিয়ে ছয় ঘণ্টা ব্যাকআপ দেয়া যায়। এরপর বিদ্যুৎ এলে ব্যাটারি চার্জ দিতে কিছুটা সময় লেগে যায়। আর ছয় ঘণ্টার ওপরে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে সেবা চালু রাখতে হয়। সারা বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ১৫ হাজার নেটওয়ার্ক সাইট আছে? সব জায়গার জন্য এমটক জেনারেটরের ব্যবস্থা করা সহজ না। এজন্য তিনি দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ যাতে বন্ধ না থাকে সে অনুরোধ করেন। শুনানিতে আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুঈন উদ্দিন বলেন, সামপ্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটররা বিদ্যুতের কোনও ব্যাকআপ সিস্টেম রাখে না। বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আপনাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে। এজন্য আপনাদেরই নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুরশেদ ও মাহমুদউল হক ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।
ভেতরে গণশুনানি, বাইরে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ: বিদ্যুতের মূল্যহার পরিবর্তনে বিইআরসি যখন গণশুনানি চলছিল, ঠিক সেই সময় বিইআরসি ভবনের সামনে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণশুনানি নামটি শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গণশুনানিতে জনগণের জন্য কোনো সুখবর থাকে না। এই গণশুনানিকে অবৈধ উল্লেখ করে তারা বলেন, গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বারবার তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
উল্লেখ্য ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী ( ওজোপাডিকো) বরিশাল খুলনা্িভাগের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে সরকার, হাইকোর্ভোলায় কোটাবিরোধীদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল তির-ধনুক দিয়ে বিবিসি সাংবাদিকের স্ত্রীসহ দুইবদলে যাওয়া পরীমনি১০ জনের দল নিয়ে উরুগুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে কলমসংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনটিআরসিএশিক্ষার্থীরা বোধহয় সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেনজেলেদের চাল আত্মসাতের বিচার দাবিতে মানববন্ধবরিশালে পুলিশের বাঁধা ডিঙিয়ে মহাসড়ক অবরোধ শিপুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে সতর্কতার অনুরোধঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মের ছুটি কমল, শনিবাপ্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভারত যাচ্ছেনওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে সুপার এইট শুরু ইংল্যদক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়াই করে হারলো যুক্তরা
%d