বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হত্যাকান্ডের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বানারিপাড়ার ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব। বরিশাল থেকে জাকিররে আটকের পরপরই বেরিয়ে আসে হত্যাকান্ডের পিছনের রহস্যগাঁথা। কুয়েত প্রবাসীর বাড়ির দুই নির্মাণ শ্রমিক জাকির ও জুয়েল একরাতে গৃহকর্তীসহ জামাতা এবং ভাগ্নিকে হত্যা করে নিজেদের আড়াল করতে চেয়েছিল। ঘাতক জুয়েল হাওলাদারকে বরিশাল শহর থেকে আটক ও নিয়ে যাওয়া সমুদয় স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। র্যাবের মিডিয়া শাখা এই তথ্য নিশ্চিত করে বলছে- ঘাতকদ্বয় জ্বীন নিয়ে আসার নামে ঘটনার রাতে নাটকীয়ভাবে ওই বাড়ির দরজা খোলা রেখে ঘরে প্রবেশ করে।
গত শনিবার ভোর রাতে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার শালিয়াবাগপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের বাড়িতে এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। প্রবাসীর বাড়িতে একাধিক সদস্যের বসবাস থাকলেও ওই রাতে বৃদ্ধ মা মরিয়ম বেগম (৭০), ভগ্নিপতি শফিকুল আলম (৬৫) এবং খালাতো ভাই ইউসুফকে (৩২) শ্বাসরোধ করে হত্যার সময়ক্ষণ কেউ আঁচ করতে পারেনি। সকালে বৃদ্ধার কলেজ পড়–য়া নাতি জেগে উঠে দাদির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। মুহুর্তে হৈই চৈই পড়ে যায়। পরে ঘরের অন্য কক্ষে ভগ্নিপতি শফিকুল এবং বাড়ির পাশে পুকুরে ইউসুফের হাত-পা বাঁধা লাশ পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায়। পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে পুরো গ্রামে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও তদন্তে নামে। পুলিশ বাড়িতে অবস্থানরত নির্মাণরত জাকির নামক এক ব্যক্তিকে আটক করে। বরিশাল র্যাবের কর্মকর্তারা পরবর্তীতে থানা অভ্যন্তরে একান্তে জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে জুয়েল নামে একজন সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। ে র্যাবের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জুয়েলের অবস্থান শনাক্তে মাঠে নামে।
শনিবার রাতে বরিশাল শহরের পশ্চিম মতাশার মুহুরিকান্দা এলাকা থেকে জুয়েলকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এই সময় জাকিরের বরিশাল নগরীর সাগরদীর ভাড়া বাসা থেকে ওই রাতে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল সেটসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত জুয়েল ও জাকিরকে মুখোমুখি করা হলে উভয়ে অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানায় লোভের বশবর্তী তিনজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পুর্বে ওই জ্বীন নিয়ে আসার নাটক সাজিয়ে ছিল।
র্যাব সূত্র জানায়- জাকির দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী আব্দুর রবের বাড়িতে নতুন ভবন নির্মাণে শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি জ্বীনের ওঝাঁ বা বাদশা পরিচয় দিয়ে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করে পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে। যাতায়াতের সূত্র ধরে প্রবাসীর বাড়িতে বেশি মাত্রার স্বর্ণালঙ্কার থাকার ধারনায় সদ্য কাজে যোগদান অপর সহযোগী নির্মাণ শ্রমিক জুয়েলের সাথে চুরির পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু ঘটনার রাতে জ্বীন নিয়ে আসার নামে বাড়ির দরজা খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া হলেও পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি থেকে বেড়াতে শফিকুল আলম ও খালাতো ভাই ইউসুফের উপস্থিতি অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে উভয় ঘাতক মিলে একে একে তিনজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার করে।
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়- যুবক ইউসুফ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে তাকে হত্যার পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়। এই ঘটনা মরিয়ম ও শফিকুল আঁচ করতে পারায় তাদেরকেও একই পরিণতির শিকার হতে হয়। হত্যাকান্ডের পরে ভোরে গ্রামবাসীর অলক্ষ্যে জুয়েল লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে বরিশাল শহরে চলে আসে। কৌশলগত কারণ অর্থাৎ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে বাড়িতে রাতে অবস্থানকারী জাকির গ্রামেই থেকে যায়। মূলত সে প্রচার করতে চেয়েছিল গোটা ঘটনাটি চুরির রুপ দিতে। কিন্তু তার সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে পুলিশ প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। খবর পেয়ে বরিশাল র্যাবের একটি টিম ছায়া তদন্তের আলোকে গ্রামে ঘুরে থানায় গিয়ে জাকিরকে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় সে পুরো ঘটনার স্বীকারোক্তি দেয়।