বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
স্টাফ রিপোর্টার \ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা। বরিশালে থ্রী ষ্টার সমমানের আবাসিক হোটেল এরিনার সপ্তম তলার কনফারেন্স কক্ষের একটি টেবিলে চার যুবক ও দুই যুবতী কাগজ কলম নিয়ে বসে খুনসুটি করছে। সেখানে তাদের পাশে চেয়ার দিয়ে বসে আছে আরও চারজন ব্যাক্তি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কোন চা-চক্রের আড্ডা চলছে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে জানা যায় ভিন্ন কথা। ওই কনফারেন্স কক্ষে চলছে পরীক্ষা। তাও আবার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা। যারা খাতা নিয়ে বসে আছেন তারা নিয়োগ প্রত্যাশী আর পাশে চেয়ার দিয়ে বসা কক্ষ পরিদর্শক।
কক্ষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কথা হয় একজন কক্ষ পরিদশক এর সাথে। তার নাম জানতে চাইলে তিনি তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অপর তিনজনও একই আচরণ করেন। পরে জানা যায় ওই চারজনের একজনও কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন। তারা আলহাজ্ব হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি আর এ হাওলাদার এর সহযোগি। সভাপতির নির্দেশে তারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর তাদের কাছ থেকে জানা যায় নিয়োগ পরিক্ষার দায়িত্বে থাকা ডিজির প্রতিনিধি বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জসীম উদ্দিন, হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন হোটেলে ৩০৩ নম্বর কক্ষে বসে কলেজ ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থপনা পরিচালক আর এ হাওলাদার এর সাথে বিশেষ আলাপচারিতায় রয়েছেন।
সেখানে কথা বলতে গেলে কলেজ ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আর এ হাওলাদার প্রথমে ক্ষিপ্ত হন । তিনি বলেন, পরিক্ষা আমার বাসভবনে নেবার ক্ষমতাও আমি রাখি। এখানে নিয়মের কোন বিষয় নেই। আমার কলেজের পরীক্ষা কোথায় নেব সেটা আমার ব্যাপার। এখানে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই।
তবে কক্ষের বাইরে বসে কথা হয় আলহাজ্ব হযরত আলী ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ জাকির হোসেন এর সাথে। তিনি বলেন, পরীক্ষার ভেন্যু ঠিক করবেন কলেজ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তার সুবিধামত স্থানে পরিক্ষা নেয়া হবে এটাঁই নিয়ম। তাই তিনি আবাসিক হোটেল এরিনার কনফারেন্স কক্ষে পরীক্ষা নেবার সিদ্ধান্ত দিলে আমরা এখানেই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে সকাল ১০টায় কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এর দুইটি শূন্য পদে এবং ল্যাব সহকারীর একটি শূন্যপদে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অপর ৫টি পদ যথাক্রমে লাইব্রেরীয়ান, আয়া, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও নৈশ প্রহরী পদে পরীক্ষা একই স্থানে দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে। তবে কতজন আবেদন করেছেন কিংবা কতজন নিয়োগ প্রার্থী পরীক্ষা অংশ নিচ্ছেন তা সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নিয়োগ প্রত্যাশী জানান, এই পদগুলোতে গত ১৮ জুলাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেখানে সভাপতির স্বজনরা উত্তীর্ণ না হওয়ায় কোন কারন ছাড়াই ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এরপর ফের পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে আমরা আবেদন করলেও আমাদের পরিক্ষার জন্য ডাকা হয়নি। হঠাৎ করেই আমরা জানতে পারি বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের একটি হোটেলে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ডিজির প্রতিনিধি সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, কলেজ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হোটেল এরিনা পরীক্ষার ভেন্যু হিসেবে ঠিক করেছেন। আমাদের বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হয়েছে। এর বাইরে কিছু করার ছিলো না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সভাপতি চাইলেই যে কোন স্থানে কলেজের নিয়োগ পরীক্ষা নিতে পারেন না। আর সেখানে সরকারের(ডিজি) প্রতিনিধি সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ যেতেও পারেন না। তবে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ কিভাবে ওই হোটেলে গেল তা আমার জানানেই। আর কলেজের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর নিয়োগ পরিক্ষা স্ব-কলেজ কিংবা পাশাপাশি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হতে পারতো। একটি আবাসিক হোটেলে পরীক্ষা নেয়া মানে প্রার্থী পূর্ব থেকে নির্বাচিত করা তাদের।