বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
হিজলা প্রতিনিধি \ বরিশালের হিজলা উপজেলায় ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে ভাটা সংলগ্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নদী, ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য। অবৈধ ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বয়স্ক ও শিশুরা। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় বেপরোয়া মালিক কর্তৃপক্ষ। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কার্যকরী ভূমিকা।
হিজলার অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইট পোড়ানো কার্যক্রম। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্বেও বেশির ভাগ ভাটাই স্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে ও স্কুল কলেজের ৩’শ মিটারের মধ্যে। ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি, যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া।
সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চার পাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার জনস্বাস্থ্য। এদিকে এলাকার গাছ কেটে উজাড় করে দিচ্ছে ইটভাটা মালিকরা, তাতে করে পরিবেশ হুমকির মুখে এবং আগামী কয়েক বছরে স্থানীয়রা ঘড়বাড়ি নির্মানে কাঠ সংকটে পড়ার সম্ভাবনা।
বরিশাল জেলার সবচেয়ে দূর্গম এবং নদী বিচ্ছিন্ন এলাকা বলে চিহৃত হিজলা উপজেলা। এ ছোট্ট উপজেলায় জেলার আর ১০ টি উপজেলার চেয়েও বেশি ইটভাটা নির্মান করা হয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান থাকলেও রহশ্যজনক কারনে অদ্যবধি হিজলায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান হয়নি। যার কারনে প্রতিবছরই ১০/১৫ টি ইটভাটা বৃদ্ধি পেয়ে আসছে।
স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের কেউ কেউ কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইটভাটায় কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের দানা (গুঁড়া) পোড়ানো হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর মধ্যে বেশকিছু ইটভাটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকদের সাথে আলাপকালে প্রত্যেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন ইটভাটা পরিচালনার কথা স্বীকার করে বলেন, ইটভাটা পরিচালনার যে নিয়ম তা কেউ মানে না। এভাবে মানাও সম্ভব নয়। আর যেখানে যে পরিমাণ খরচ তা আমরা করেই পরিচালনা করছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন একেবারেই নীরব। বেপরোয়া মালিক ক্ষমতার জোড়ে ফসলী জমির মাটি অনেক গভির করে কাটছে, এতে আশপাশের ফসল নস্ট হয়ে মাটি ভেঙ্গে পড়ছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ভুক্তভুগীদের।
এ ব্যাপারে কথা হলে হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমীনুল ইসলাম ইটভাটায় অবৈধ ভাবে কাঠ পোড়ানো ও ফসলী জমি কাটছে এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন আগামী সপ্তাহে এসকল অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।