বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
স্টাফ রিপোর্টার \ অগ্নি নির্বাপন, ডুবে যাওয়া মানুষ উদ্ধারসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অসাধ্য সাধণে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা সব সময়ই প্রশংসনীয়। এবার আরও একটি অসাধ্যকে সাধণ করে প্রশংসিত হয়েছে বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। তারা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রোগীর জীবন বাঁচাতে অস্ত্রপচারেও ভূমিকা রেখেছেন। ১৫ বছর বয়সী কিশোরের চোয়াল থেকে ঢুকে মাথার পাশ দিয়ে বের হওয়া বড় সাইজের রড কেটে অস্ত্রপচারে চিকিৎসকদের সহায়তা করেছে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। তাদের এ সহযোগিতার কারণে চিকিৎসকদের সফল অস্ত্রপচারে প্রাণে বেঁচে গেছেন মো. সিয়াম নামের কিশোরটি। ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ ডিসেম্বর শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। ফায়ার সার্ভিসের অপারেশনে বেঁচে যাওয়া কিশোর সিয়াম বোরহানউদ্দিন উপজেলার জয়া গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স বরিশাল সদর কার্যালয়ের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর দেবাশীষ বিশ^াস জানান, ‘সিয়াম নামের কিশোর নিজ গ্রামে বাইসাইকেল চালাচ্ছিলো। এ সময় সেখানকার নির্মানাধীন একটি ব্রিজে দুর্ঘটনা ঘটে সে পড়ে যায়। তখন নির্মানাধীন ব্রিজে ১৬ মিলি মিটার (৫ সুতার) সাইজের রড তার মুখমন্ডলের নীচের অংশে চোয়াল থেকে গলা হয়ে মাথার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ওই অবস্থায় কিশোর সিয়ামকে প্রথমে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর রাতেই সিয়ামের গলার মধ্যে গেথে যাওয়া রড অপসারণে ৫ম তলায় অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রপচার শুরু করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রডটি যেভাবে গলার মধ্যে গেথে ছিলো, তাতে স্বাভাবিকভাবে তা অপসারণ করা চিকিৎসকদের সম্ভব হচ্ছিলো না। পরবর্তীতে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বরিশাল সদর ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর দেবাশীষ বিশ^াসের নেতৃত্বে একটি দল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ছুটে যান।
দেবাশীষ বিশ^াস বলেন, ওই রডটি গলার ডানপাশে উপরের অংশ থেকে বের হয়ে আটকে ছিলো। তখন হাসপাতালের নাক-কান ও গলা বিভাগের ডা. মো. মইনুজ্জামান ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হাইড্রোলিক কাটার, লক কাটারসহ অন্যান্য যন্ত্রের সাহায্যে গলার মধ্যে গেথে থাকা রডটির অতিরিক্ত অংশ চোয়ালের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এর পর পরই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রপচার শুরু করেন চিকিৎসক। ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর দেবাশীষ বিশ^াসের নেতৃত্বে কিশোরের গলার রড অপসারণ অপারেশণে ফায়ার সার্ভিসের লিডার মো. সানাউল সরদার, ড্রাইভার মো. এরশাদ মোল্লা, ফায়ার ফাইটার মো. ফজলুর রহমান, মো. জুয়েল খান, মো. রিয়াদ খান ও বরুন সরকার অংশ নেন।
এদিকে শনিবার রাতে সফল অস্ত্রপচার শেষে কিশোরকে নিবিড় পর্যবেক্ষনের জন্য হাসপাতালের পোস্টঅপারেটিভে পাঠানো হয়। রোববার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিশোরের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের ই.এন.টি বিভাগের চিকিৎসক মো. মইনুজ্জামান।