বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
দুটি হাত না থাকার পরও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিয়ে ১২ বছরের মুক্তামনি জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ ফলাফল অর্জন করে মুক্তা।
বিদ্যলয়ে প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নাছিমা খানম বলেন, এবার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৪ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিয়েছে। এদের মধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পরীক্ষায় পা দিয়েই লিখছে সে। ওর সেই লেখাও অন্যদের হাতের লেখা চেয়ে অনেক সুন্দর। আর একমাত্র মুক্তাই ১৪ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ফলাফল পাওয়ার পর মুক্তামনি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে নাছিমা খানম বলেন, রেজাল্ট ভালো করায় মুক্তা ও তার পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। তবে এখন বৃত্তি পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।
তিনি যোগ করেন, মুক্তামনির পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পর তার দাদী মারা যায়। তাই এখন সে মায়ের সঙ্গে ঢাকার অবস্থান করছে। সেখানে সাভারের একটি স্কুলেও ভর্তি হয়েছে বলে জেনেছি আমরা। মুক্তার চিকিৎসা ও সেসহ আরও এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান মা। মুক্তামনির স্বপ্ন একদিন সে শিক্ষক হবে।
বিনা কারণে মুক্তামনি কখনও স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনি বলে জানান প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নাছিমা খানম।
মুক্তার দুই হাত হারানোর বিষয়ে স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন মা ঝুমুর বেগমের গার্মেন্টসে চাকরির সূত্রে ঢাকার সাভারে যায় মুক্তা। সেখানেই একদিন পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদুতিক তার চেপে ধরে মুক্তা। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় এক পর্যায়ে পুরোপুরি দুতো হাতই শরীর থেকে বাদ দিতে হয়।
তারা জানান, পত্তনীভাঙ্গ গ্রামে দাদী জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করেন মুক্তামনিকে।
নতুন স্কুলজীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।