একদিনে ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড

  • আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২০ ২০২০, ২১:০৫
  • 808 বার পঠিত
একদিনে ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড
সংবাদটি শেয়ার করুন....

গতকাল দেশে ৩টি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পৃথক রায়ে ৫ পুলিশসহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশের গুলিতে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ পুলিশকে, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনকে এবং ঢাকায় স্কুল ছাত্র অপহরনের পর হত্যার দায়ে ৪জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সকালে ঢাকায় সিপিবির মামলার, বেলা সোয়া তিনটায় চট্টগ্রাম বিশেষ জজ আদালতের চট্টগ্রামে গুলি করে ২৪জনকে হত্যা মামলার রায় এবং ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্কুল ছাত্র হত্যার রায় ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম গণহত্য
চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
দÐপ্রাপ্তরা হলেন- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তৎকালীন কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুল্লাহ, মমতাজ উদ্দিন, পেট্রোল ইনসপেক্টর জে সি মন্ডল। জে সি মন্ডল পলাতক রয়েছেন।
গত ১৪ই জানুয়ারি ৫৩তম সাক্ষী আইনজীবী শম্ভুনাথ নন্দীর সাক্ষ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
ওইদিন আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১৯শে জানুয়ারি দিন ঠিক করেন। রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শেষে পাঁচ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে আদালত আসামি পক্ষে যুক্তি উপস্থাপণের জন্য আজকের দিন রেখেছিলেন। কিন্তু আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন না করায় আদালত রায় ঘোষণার সময় ঠিক করেন।
উল্লেখ্য, এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি বন্দরনগরীর লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিলো। ওইদিন বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে আসার সময় গুলিবর্ষণ শুরু হয়। বিভিন্ন সময় এই মামলার সাক্ষীরা আদালতে বলেছেন, ওইদিন পুলিশের গুলিতে মোট ২৪ জন মারা যান।
গুলিবর্ষণের পর আইনজীবীরা মানববেষ্টনি তৈরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রক্ষা করে তাকে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন। গুলিতে নিহতদের কারও লাশ পরিবারকে নিতে দেয়নি তৎকালীন সরকার। হিন্দু-মুসলিম নির্বিচারে সবাইকে বলুয়ার দীঘি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ই মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়ে মামলার কার্যক্রম এগোয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়।
সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা
এদিকে রাজধানীতে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনকে মৃত্যুদÐদিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত দুইজনকে খালাস দিয়েছেন। সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্তরা হলেন- মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম।এদের মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও এই মামলার আসামি ছিলেন। অন্য একটি মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়।মামলা থেকে খালাস পাওয়া দু’জন হলেন- মশিউর রহমান ও রফিকুল ইসলাম মিরাজ। ১৯ বছর আগে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির লাল পতাকা সমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে দলটির পাঁচ কর্মী নিহত হন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান, ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন সাক্ষ্য দেন। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি।
স্কুল ছাত্র অপহরনের পর হত্যা মামলা
রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের চয়ন একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কাউসার হত্যার মামলায় এক দম্পতিসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।সোমবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম এ রায় দেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি হুমায়ুন কবির চৌধুরী জানান।মৃত্যুদÐপ্রাপ্তরা হলেন, আলতাফ হোসেন ও তার স্ত্রী ফরিদা, জামির আলী এবং শাহজাহান। আসামিদের মধ্যে জামির আলী পলাতক। অন্য তিন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন।রায় ঘোষণার আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।রায়ের বিবরণে বলা হয়, কাউসারের বাবা মো. ইব্রাহিম আলী কামরাঙ্গীর চরের জাউলাহাটিতে পরিবার নিয়ে থাকেন। সেখানে তার মুদি দোকান আছে।আসামি শাহজাহান সেখানকার একটি সেলুনে কাজ করতেন। সেখানে আসা-যাওয়ার সুবাদে কাউসারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আসামি জামির একবার শাহজাহানকে জানায়, তার টাকা দরকার। এরপরই তারা টাকার জন্য কাউসারকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।২০১২ সালের ১৬ মে সকাল থেকে ১৭ মে বিকেলের কোনো এক সময় তারা কাউসারকে অপহরণ করে নিয়ে আলতাফের বাসায় খাটের নিচে আটকে রাখে।পরে চিরকুট পাঠিয়ে এবং মোবাইল ফোনে তারা কাউসারের বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় কাউসারের পরিবার কামরাঙ্গীর চর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।কাউসারের পরিবার পরে ১৯ মে নবাবগঞ্জে অপহরণকারীদের হাতে মুক্তিপণের টাকা তুলে দিলেও তারা অপহরণকারীরা তাকে ফেরত দেয়নি।এরপর ২৬ মে অপহরণের মামলা করা হয়। মামলাটি পরে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পায়। এরপর অপহরণকারীরা কাউসারের বাবার কাছে আরো এক লাখ টাকা দাবি করে। ১৫ আগস্ট আসামি জামিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলতাফ, তার স্ত্রী ফরিদা ও শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণের প্রায় তিন মাস পর ওই বছরের ১৮ অগাস্ট দুপুরে কাউসারের বাসার কাছে দেয়ালঘেরা একটি জমির মাটি খুঁড়ে তার দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।পরনের জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি দেখে কাউসারের দেহাবশেষ শনাক্ত করেন স্বজনেরা। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, অপহরণের পরদিন রাতেই কাউসারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে সরকার, হাইকোর্ভোলায় কোটাবিরোধীদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল তির-ধনুক দিয়ে বিবিসি সাংবাদিকের স্ত্রীসহ দুইবদলে যাওয়া পরীমনি১০ জনের দল নিয়ে উরুগুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে কলমসংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনটিআরসিএশিক্ষার্থীরা বোধহয় সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেনজেলেদের চাল আত্মসাতের বিচার দাবিতে মানববন্ধবরিশালে পুলিশের বাঁধা ডিঙিয়ে মহাসড়ক অবরোধ শিপুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে সতর্কতার অনুরোধঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মের ছুটি কমল, শনিবাপ্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভারত যাচ্ছেনওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে সুপার এইট শুরু ইংল্যদক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়াই করে হারলো যুক্তরা
%d