বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
প্রধান শিক্ষক শাহ আলম। বরিশালের নামকরা জগদ্বিশ সারশ্বত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যোগদান করেন ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর। এরপর থেকেই ভেঙ্গে পড়ে পুরো স্কুলের শৃংখলা। পকেটে পুড়তে থাকেন অর্থ। রাজনৈতিক তদবিরে যোগদান করা শাহ আলম শিক্ষকদের উপর ছড়ি ঘুরানোর অনবরত চেষ্টায় ফুসে উঠে শিক্ষক কর্মচারীরা। ২০১৮ সালে একযোগে ১১ শিক্ষক কর্মচারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। কিন্তু এই দেড় বছরেও এই জিডিগুলোর কোন তদন্ত হয়নি বলে শিক্ষকরা জানান। আর এ কারনেই স্কুলে ঘটে চলেছে একের পর এক অপ্রিতিকর ঘটনা। খোদ শিক্ষকরাই এখন হাত তুলছেন প্রধান শিক্ষকের গায়ে। তাতেও লজ্জা পাচ্ছেন না তিনি। বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন তার কাজ। থানায় ডায়েরীর ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জানান আদালতের নির্দেশে এসব জিডির তদন্ত বাতিল বলে গন্য হয়েছে। কিন্তু কোন জিডির তদন্ত আদালতের নির্দেশে বাতিল হবে এটি নিয়মের মধ্যে পড়ে না বলে শিক্ষকরা জানান।
২০১৭ সালে জগদ্বিশ সারশ্বত বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি নিজামুল ইসলাম নিজামের সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন শাহ আলম। তিনি এর আগে মোহনগঞ্জ স্কুলে কর্মরত ছিলেন। জগদ্বিশ সারশ্বত বালিকা বিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই তিনি শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে অশালিন ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে। আগে স্কুলের টাকা সরাসরি ব্যাংকে চলে যেত। তিনি যোগদানের পর এ টাকা নিজের পকেটে রাখা শুরু করেন। অর্থের যথেচ্ছা ব্যবহারে ক্ষোভ বাড়তে থাকে শিক্ষকদের মধ্যে। এক পর্যায়ে তার অশালিন ব্যবহার আর অর্থ আত্মসাত নিয়ে ক্ষুদ্ধ শিক্ষক কর্মচারীরা আইনের আশ্রয় নেন। ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল একযোগে ১১ শিক্ষক কর্মচারী বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় ১১টি পৃথক জিডি করেন। জিডি গুলোর নং ৮৯৬ থেকে শুরু। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী আরতি বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেছিলেন তাকে প্রতিদিনই গালিগালিজ করা হত। একদিন তিনি তার দুব্যবহারে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক সন্ধ্যা রানী চক্রবর্তী জিডিতে উল্লেখ করেন ভাউচার ছাড়াই প্রধান শিক্ষক প্রতিদিন তার কাছ থেকে জোড় পুর্বক টাকা নিয়ে নেন। প্রতিবাদ করলে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। প্রায় সবগুলো জিডিরই একই ভাষা।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ জিডিগুলো দায়েরের সময় তিনি এ থানার দায়িত্বে ছিলেন না। তবে গতবছরই কিছু শিক্ষক থানায় এসেছিলেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। তবে কেউ মামলা না করায় তিনি কিছু করতে পারেননি।
প্রধান শিক্ষক শাহ আলম জানান, এ জিডিগুলো সব উদ্দেশ্য প্রনেদিত। যা আদালতের মাধ্যমে তদন্ত হয়েছে এবং জিডিগুলো মিথ্যে বলে প্রমানিত হয়েছে। তার কাছে এর সব প্রমানাদি রয়েছে।
তবে যারা জিডি করেছেন তাদের একজন জানান, একদিন থানা থেকে একজন অফিসার এসেছিলেন। তারপর আর তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে আদালতের মাধ্যমে জিডিগ্রলোর তদন্ত বাতিল হয়েছে এমন খবরে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেনে। তার প্রশ্ন রাখেন, জিডি কখনও আদালতের আদেশের মাধ্যমে শুরু বা বাতিল হয় তা তারা জানেন না।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইনজীবি এ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল জানান, জিডির অর্থ হল থানাকে কোন ঘটনা অবহিত করা। যা পুলিশ মনে করলে তদন্ত করতে পারে। যেমন সব জিডির তদন্ত হয় না। কোন কিছু হারিয়ে গেলে, বা পুড়ে গেলে নিয়ম মাফিক জিডি করতে হয়। আদালতের মাধ্যমে কোন জিডির তদন্ত শুরু বা বাতিল করার কোন আইন আছে তিনি জানেন না। জিডি বাতিল করতে হলে আরেকটি জিডি করে তা বাতিল করতে হয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী সাহায্য চাওয়া শিক্ষক কর্মচারীরা এখনও আইনের দিকে তাকিয়ে আছেন। কবে তাদের জিডির ব্যাপারে তদন্ত শুরু হবে। অপর দিকে এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি রাবেয়া খাতুনের করা তদন্তে ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের যে রিপোর্ট রয়েছে তাতেও প্রধান শিক্ষককে দমানো যায় নি। একবারের বেশি এডহক কমিটি না করার যে বিধান রয়েছে তাতেও তিনি বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে চলেছেন। আর পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে দাবি শিক্ষকদের। গত সপ্তাহেই শিক্ষকদের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক। সামনে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।