বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হল। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শর্ত মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করতে হবে ৩১ আগষ্টের মধ্যে। মাঝে তাগাদাও দেয়া হল। করোনার ছুটির মাঝে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তড়িঘরি করে তালিকা তৈরি করল। এবার জমা দেবার পালা। শেষ মুহুর্তে অর্তাৎ ৩১ আগষ্ট দুপুরের পর বরিশাল উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফোন করে জানানো হল -এ বছর মেট্রোপলিটন ও পৌর এলাকার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যে চিঠি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়েছে তার মধ্যেই এ বিষয়টি উল্লেখ আছে।
বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বরিশালের মেট্রোপলিটন এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেইলে উপবৃত্তি সংক্রান্ত চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের। চিঠিতে তালিকা তৈরি করে ৩১ আগষ্টের মধ্যে অন লাইনে প্রেরণ এবং মূল কপি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেয়ার নির্দেশ ছিল। শর্ত মোতাবেক ছাত্রীদের ৪০ ভাগ এবং ছাত্রদের ২০ভাগ উপবৃত্তির আওতায় আসবে। বরিশালের বেসরকারী কলেজের মধ্যে অমৃত লাল দে মহা বিদ্যালয় অন্যতম। আড়াই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এ কলেজে। গত ১৫দিন থেকে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়। আবেদনের সাথে অভিভাবকের আইডি অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের ছবি এবং সনদের সত্যায়িত কপিও জমা দিতে বলা হয়। করোনার মধ্যে দ্রতলয়ে কাজ করে ৩১ আগষ্টের মধ্যে তালিকা তৈরি করা হয়। বরিশাল সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজত কুমার দেবনাথ ৩১ আগষ্ট সোমবার বিকালে যান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। উপবৃত্তির তালিকায় সভাপতি জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর আনার জন্য। সেখানে বসে তিনি জানতে পারেন মেট্রোপলিটন এলাকার শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির আওতাভূক্ত নয়। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। দিন রাত কাজ করে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান। জানা গেছে শুধু অমৃতলাল দে বা সিটি কলেজ নয়, নগরীর উদয়ন স্কুল, একে স্কুল, হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়, বিএম স্কুল, টাউন স্কুল, নুরিয়া স্কুল, মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তির কাজ সম্পন্ন। এমনকি বরিশালের প্রতিটি পৌর এলাকায় তালিকা তৈরি করে বসে আছেন। ৩১ আগষ্ট বিকাল পর্যন্ত উপবৃত্তির কাজ করেছে বরিশাল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। মোবাইলে তিনি জানতে পারেন সব কাজ বৃথা। করোনা পরিস্থিতির মাঝে শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে এবার উপবৃত্তির কাজ করেছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগযোগও করা হয়েছে। কেউ কেউ আগেই তালিকা নিয়ে শিক্ষা অফিসে গিয়েছেন বলে জানান। কিন্তু এবার অনলাইনে উপবৃত্তির তথ্য সংযোজন করা হবে উল্লেখ করে ৩১ আগষ্টের আগে তালিকা জমা না নেয়া কথা জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা অফিসগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জানান, তাকে কয়েকবার তাগাদাও দেয়া হয়েছে তালিকা সম্পন্ন করার জন্য। এখন বলা হচ্ছে উপবৃত্তি দেয়া হবে না। তাহলে আগে কেন উল্লেখ করা হল না।
তবে মাউসির চিঠির ২ নং অনুচ্ছেদ উল্লেখ ছিল “ কর্মসূচি এলাকা: মেট্রোপলিটন ও জেলায় সদরের পৌর এলাকা ব্যতীত দেশের অন্যান্য এলাকার সাধারণ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। তিনটি পার্বত্য জেলা সদরের পৌর এলাকার সমূহের উপবৃত্তির আওতায় থাকবে।” তবে বিষয়টি শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কারো নজরে আসেনি বিষয়টি। এখন শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় আছে কবে উপবৃত্তি আসবে? আর প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দ্বিধান্বিত, কিভাবে শিক্ষার্থীদের বলবেন, তোমাদের উপবৃত্তি হবে না।
চিঠিতে উল্লেখ আছে শিক্ষা অফিসের এমন দাবির মুখে আরেকজন প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিবছরে যে চিঠি আসে এবারেও একই চিঠি। শুধু কোটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই চিঠির ভিতরে আমরা কেউই লক্ষ করিনি। যদি নাই দেবে, তবে চিঠি পাঠালো কেন? তাগাদাও কেন দিল? এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসের আওতাভূক্ত। উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তারা ব্যস্ত রয়েছেন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃুত্তি সংক্রান্ত সংবাদটি জানানোর জন্য।