বরিশাল ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৬ হিজরি
বিজ্ঞানী কার্ল সেগান ১৯৯৪ এ প্রকাশিত তার A Vision of the Human Future in Space বইটিতে পিকচারের এই নীল বিন্দুটির নাম রাখেন A Pale Blue Dot এবং এটি নিয়ে তার দার্শনিক মনোভাব তুলে ধরেন।
এই পিকচার এর এই নীল বিন্দুটিকে আরো একবার দেখুন। এটাই ওই স্থান যেখানে আমাদের ঘর, এটাই আমরা আর প্রতিটি ওই ব্যাক্তি যাদের আপনি ভালোবাসেন, সেই সমস্ত ব্যাক্তি যাদের আপনি চিনেন, ওই সমস্ত ব্যাক্তি যাদের সম্পর্কে আপনি কখনো শুনেছেন, ওই সব ব্যাক্তি যারা কখনো এখানে ছিল, তারা সবাই এই নীল বিন্দুতেই তাদের জীবন অতিবাহিত করেছে। আমাদের সব সুখ আর দুঃখ, আমাদের সব রকমের বিপদ, বিশ্বাসে ভরা সব ধর্ম, মান্যতা, আর্থিক নীতি, প্রতিটি শিকারী আর প্রতিটি শিকার, প্রতিটি হিরো আর প্রতিটি ভীতু, সভ্যতাকে জন্ম দেয়া প্রতিটি নির্মাতা, আর সব কিছু ধ্বংস করে দেয়া সেই হামলাকারী, প্রতিটি রাজা আর প্রতিটি গোলাম, প্রেমে ডোবা প্রতিটি প্রেমিক আর প্রেমিকা, প্রতিটি মা আর প্রতিটি পিতা, প্রতিটি রাজনীতিবিদ আর প্রতিটি নেতা, প্রতিটি সুপার ষ্টার আর প্রতিটি দুর্নীতিবাজ, প্রতিটি সাধু আর প্রতিটি পাপী, যাদের দ্বারা মানব সভ্যতার ইতিহাসের পাতা ভরপুর তারা সবাই সূর্যের আলোতে চোখে পড়া ছোট্ট এই নীল বিন্দুতেই জন্ম নেয়, আর তার মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এই অনন্ত ব্রক্ষ্মান্ডে পৃথিবির স্থান খুবই ছোট। এখন ঐ সমস্ত হামলাকারীর সম্পর্কে ভাবুন! যারা এই বিন্দুর ছোট্ট একটি স্থানের ক্ষুদ্র একটি অংশকে কব্জা করার জন্য মানবতাকে লজ্জ্বিত করেছে। কার্ল সেগান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ঐ ভয়ংকর অত্যাচারের কথা ভাবুন, যেটা বিন্দুর একদিকের মানুষ অন্যদিকের মানুষের সাথে করেছে। তারা কতটাই না অবুঝ আচরণ করেছে। তার একে অপরকে মারার জন্য এতটাই ব্যকুল হয়ে উঠেছিলো। একে অপরের প্রতি তাদের ঘৃণা কতটাই না গভীর ছিলো! আমরা যে অহংকার করি এই ব্রক্ষ্বান্ডে আমাদের একটি বিশেষ স্থান আছে, এসব কথাকে এই পিকচারের এই নীল বিন্দুটি চ্যালেঞ্জ করছে!!! ব্রক্ষ্মান্ডের এই অনন্ত অন্ধকারে, আমাদের এই পৃথিবি একটি ধূলিকাণাও নয়। অনন্ত ব্রক্ষ্মান্ডে এমন কোন স্থান নেই, যেখান থেকে আমরা বিপদে পড়লে আমাদেরকে কেউ রক্ষা করতে আসবে বলে মনে হয়। এখনও পর্যন্ত পৃথিবিই একমাত্র স্থান যেখানে প্রাণ আছে। এমনকি নিকট ভবিষ্যতেও এমন কোন স্থান নেই যেখানে মানব সভ্যতা বসবাসের জন্য যেতে পারে। হ্যাঁ আমরা পৃথিবির বাইরে অনেক স্থান পর্যন্ত গিয়েছি কিন্তু কোথাও গিয়েই আমরা স্থায়িভাবে বসবাস স্থাপন করতে পারি নি। এখন আপনি ঠিক পছন্দ করুন আর নাই করুন, আমাদেরকে এখানেই থাকতে হবে। আমার মতে এই পিকচারটি আমাদেরকে আমাদের কর্তব্যের কথা বলছে। আমাদেরকে একে অপরের প্রতি আরও নরম এবং সহনশীল হতে হবে, যেনো আমরা এই ছোট্ট বিন্দুটিকে আমাদের বসবাসের উপযুক্ত রেখে একেও বাঁচিয়ে রাখতে পারি।
– কার্ল সেগান (A Vision of the Human Future in Space , 1994)