ব‌রিশাল অগ্রনী ব্যাংকে হযবরল অবস্থা

  • আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ২৫ ২০১৯, ১৫:৫১
  • 817 বার পঠিত
ব‌রিশাল অগ্রনী ব্যাংকে হযবরল অবস্থা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

আ‌রিফুর রহমান\
অগ্রনী ব্যাংক লিঃ বাং\লাদেশের একটি অন্যতম রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাংকের এমডি’র ৮০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে ব্যাংকের স্ব স্ব জোনের দায়িত্বরতরা। অথচ বরিশালের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ব্যস্ত রয়েছেন নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে। বদলী আদেশ, ইচ্ছেকৃত বদলী, পছন্দসই লোককে সুবিধাজনক স্থানে বদলী এবং এমডি’র চলমান কর্মসূচীর মধ্যে দায়িত্বশীল (ঋণ) অফিসারদের বদলীতে ঋণ আদায়ের চেয়ে বকেয়ার পরিমান বাড়ার আশংকা করছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। ফলে বরিশালে ব্যাংকটিতে চরম অসস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ভেতরগত রেষারেষি আর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারী না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এদিকে এমডি’র কর্মসূচি সফল করতে কর্মীদের মধ্যে প্রেষনা সৃষ্টি না করলেও তাদের কর্মস্পৃহা কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল অগ্রনী ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশাল সার্জেল জিএম। তার দাবী, একটি চক্র দলীয় সাংগঠনিক পদ শক্ত করতেই একে অপরের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ সরকার ও ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত ভেন্ডরস চুক্তির মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ১৫ নভেম্বর ২০০৭ থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রূপে নতুন অভিযাত্রা শুরু করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন উৎসাহ ও অঙ্গীকার নিয়ে দেশের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে টেকসই ভিতের ওপর দাঁড় করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক সকল উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ব্যাংকটির বরিশাল জোনে ব্যাক্তিগত আক্রোসের কারণে সেই উদ্যোগে ভাটা পড়তে যাচ্ছে। কেননা এখানকার সার্কেল ডিজিএম এবং জোনাল ডিজিএম’র পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংকটির নিয়মের তোয়াক্কা না করেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাদের সহযোগিতা করছেন তাদেরই অনুগত শাখা ব্যবস্থাপকগণ। অপরদিকে ব্যাংকটির বরিশালের জিএম অভিযোগগুলো কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জুন/জুলাই মাসে অগ্রনী ব্যাংক ভোলা শাখায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া সোমা আক্তার যোগদান করেন। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই তাকে বরিশাল নগরীর পুরানবাজার শাখায় বদলী করিয়ে আনেন জিএম ফারুক আহম্মেদ। অথচ ব্যাংকের বিধিতে আছে চাকুরীতে যোগদানের পর কমপক্ষে তিন বছর পর শহর শাখায় বদলী হতে পারবেন যে কোন অফিসার। জিএম ফারুক আহম্মেদের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় বিধি বহির্ভূত এমন বদলী হয়ে সোমা আক্তার পুরান বাজার শাখায় যোগ দেন বলে একটি সূত্র জানান। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জিএম ফারুক আহম্মেদ বলেন, সোমা একজন অবিবাহিত মেয়ে। সেখানে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে মানবিক কারনেই তাকে পুরানবাজার শাখায় সাময়িক বদলী করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বদলীর কারণে এমডি’র ৮০ দিনের কর্মসূচীতে কোন প্রভাব পড়বে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছর ১ এপ্রিল সার্কেল ডিজিএম মোঃ ফরিদুল আলম চলতি বছর ১ এপ্রিল উপ-মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মহ-ব্যবস্থাপক বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন। যাতে উল্লেখ করা হয় প্রধান কার্যালয়ে নির্দেশ পরিপত্র নং সিপিসিআরএমডি/৬৪ তারিখ ৬-৬-২০১৭ এর অনুচ্ছেদ নং ৪ (গ) এর নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ গৃহ নির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয় ব্যাংকের প্রকৌশলী অথবা স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের কমপক্ষে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) কর্তৃক সঠিকভাবে নিরূপন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বরিশালের শাখা সমূহে সাধারণ গৃহ নির্মাণ ঋণের প্রস্তাবসহ পর্যালোচনায় দেখে গেছে, বরিশাল অঞ্চলাধীন মুলাদী শাাখার ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হাকিম সাধারণ গৃহ নির্মাণ ঋণের প্রস্তাবে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপ সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে নির্মানাধীন ভবনে প্রাক্কলিত ব্যয় নিরূপন করেছেন। যা ব্যাংকের মত একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনাকাঙ্খিত।

তবে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হাকিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়টি আড়াল করা হয়েছে। উপরন্তু ওই পত্রে ঋণ প্রস্তাবে সাথে সংযুক্ত যাবতীয় কাগজপত্রাদি সঠিকতা নিরূপনপূর্বক শাখা ব্যবস্থাপক কর্তৃক স্বাক্ষরিত একখানা নিশ্চয়তাপত্র প্রতিটি ঋণ প্রস্তাবের সাথে অত্র সার্কেল সচিবালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় জোনাল ডিজিএম মুঃ আফজাল হোসেন সকল শাখায় এ সংক্রান্ত নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য একটি সাধারণ পরিপত্র জারি করেছেন। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, জোনাল ডিজিএম এবং সার্কেল ডিজিএম পরস্পর যোগসাজশে ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হাকিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে বরং সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সার্কেল প্রধান ফারুক আহম্মেদ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এটি তদন্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক। ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি দাবী করে তিনি বলেন, আসলে একটি গ্র“প আছে যারা ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কি আর বলবো, আসলে বরিশালে অগ্রনী ব্যাংকে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।”

তিনি দাবী করেন, চুন থেকে পান খসলে কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে এক শ্রেনীর কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি বলেন, যা আসলে ঠিক নয়। এটা সার্ভিস রুল পরিপন্থি দাবী করে তিনি বলেন, কোন সমস্যা থাকলে আমাদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করা যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেন, কেউ আ’লীগ করেন কিন্তু সকলেই এক ঘরানার। সাবেক এমপি তালুকদার মোঃ ইউনুস ও বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এ বিষয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি তাদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলায় তারা ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী কাজ করতে বলেছেন তারা বলেও জানান তিনি।

অপর এক সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতিজনিত বদলী হয়ে বরিশাল কাশিপুর শাখায় যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে খোদ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে। অভিযোগ রয়েছে তিনি যোগদান করার পর ব্যাংকের কোন স্টাফ সময়মতো নামাজে যেতে পারবেন না, এমনকি নারী কর্মকর্তাকে (নিয়ম না থাকলেও) রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় যেতে না দেয়া ইত্যাদি। সূত্রটি জানায়, এ ঘটনায় ব্যাংকের ১১জন স্টাফের মধ্যে ৮ জন স্টাফ জিএম ও ডিজিএম এর কাছে গিয়ে মৌখিক অনাস্থা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার আসমা আহম্মেদ মুঠোফোনে জানান, ডিজিএম স্যার এসে বিষয়টি মিমাংশা করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জিএম ফারুক আহম্মেদ জানান, আমরা তদন্ত করে বিষয়টি জেনেছি এটা সঠিক নয়। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে বলা হয়েছে। আমাদের ডিজিএম বিষয়টি তদন্ত করে আমাকে জানিয়েছেন বিষয়টি আসলে ঠিক নয়। তিনি দাবী করেন, শাখা ব্যবস্থাপক সকল কর্মকর্তাকে কাজের জন্য চাপ দেয়ায় শাখা ব্যবস্থাপক অসীম কুমারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিচুয়ালের বিষয়টি আমি জানিনা, তবে তিনি গিয়েছিলেন বলে জানি। আর তিনি যদি মিচুয়াল করে থাকেন এ ব্যাপারেতো আর কোন কথা থাকে না। সবমিলিয়ে বরিশালে অগ্রনী ব্যাংকের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যা এখানকার জিএম ফারুক আহম্মেদও স্বীকার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বরিশালের সার্কেল, জোনাল ডিজিএম এবং একজন শাখা ব্যবস্থাপক সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত স্টাফদের হয়রাণী করে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে অগ্রনী ব্যাংক লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামসুল ইসলাম কর্মকর্তাদের বদলীর বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি দেখতে হবে। জিএমকে এ বিষয়ে অবহিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকের কোন অনিয়ম যদি ঘটে থাকে তবে অবশ্যই তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখানে যেই জড়িত থাকুক কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
আইপিএল ছেড়ে দেশে ফিরতে হবে মুস্তাফিজকে!ইডেনের গ্যালারিতে বসেই ধূমপান, প্রবল সমালোচনআরো ১১৮ বুদ্ধিজীবীর তালিকা দিল মুক্তিযুদ্ধ মঢাকার বস্তির বেশিরভাগ মানুষ বরিশালেরভারতে উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতলো বাংলাদেশপুরো রমজান মাস বন্ধ থাকবে প্রাথমিক-মাধ্যমিক প্রাথমিক শিক্ষকদের অনলাইনে বদলি শুরু চলতি মাভুটানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিল মেয়েরাপাকিস্তানে ইমরান খানের জেলে হামলা, আটক ৩জাতির পিতা সংবিধানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত কপিরোজপুরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ নিহত মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, আজকে সেটাই প্রমাণিত:
%d