বরিশাল ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
বরগুনা প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সাভার থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনা আসা সেই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে তাকে সুস্থতার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে এ ছাড়পত্র পেলেন তিনি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জেলা পুলিশ তাদের নিজস্ব পরিবহনে ওই ব্যক্তিকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে বরগুনা জেলা পুলিশ। এরপর ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর দুদিন পর গত ১৪ এপ্রিল তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর থেকেই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এনিয়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর বরগুনায় পাঁচজন রোগী এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়াও জেলায় চিকিৎসাধীন বাকি ২৩ জন রোগীও সুস্থতার পথে রয়েছেন।
মঙ্গলবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা এই ব্যক্তি ঢাকার সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দেশব্যাপী চলমান অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে ৭ এপ্রিল বরগুনার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সাইকেলে তিনদিনের যাত্রা শেষে ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বরগুনার নিজ বাড়ি পৌঁছান তিনি।
তবে স্বজনদের অনুরোধ উপেক্ষা করে চিকিৎসা না নিয়ে অসুস্থ শরীরে বাড়িতে আসায় তাকে ঘরে উঠতে দেননি তার স্ত্রী। এরপর শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এই ব্যক্তির এমন অসচেতনভাবে বরগুনা আসার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়।
অন্যদিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় এমনভাবে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে লজ্জিত হন তিনি এবং এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তাই নিরুপায় হয়ে এমনভাবেই স্বজনদের কাছে এসেছিলেন তিনি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রধান চিকিৎসক কামরুল আজাদ বলেন, যথাসময়ে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা পাওয়ায় ওই ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। উপসর্গ অনুযায়ী আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি। আমরা সব থেকে বেশি যা করেছি, তা হলো তাকে মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছি। ভেঙ্গে পড়তে দেইনি। সবসময় তাকে উৎসাহ দিয়েছি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দেয়ার। করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও লক্ষণ দেখে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। সার্বক্ষণিক তাদের নজরদারিতে রেখেছি। এসব কারণে আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এ কৃতিত্ব বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সব চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড ইনচার্জ এবং নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের।
বরগুনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন নারী ও তিনজন শিশু রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন দুজন। আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা সদরে ১২ , আমতলীতে ৭ , বামনায় ৬ , বেতাগীতে ৩ এবং পাথরঘাটায় ২ জন রয়েছেন।