বরিশাল ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
বরগুনা প্রতিনিধি : একের পর এক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনারোগীরা। আজ বুধবার একদিনেই বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন চারজন করোনারোগী। এদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী রোগীসহ ষাটোর্ধ্ব রোগী ছিলেন দুজন।
এর আগে গত এক সপ্তাহে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ষাটোর্ধ্ব একজনসহ আরো পাঁচজন। সবমিলিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া ১১ জন করোনারোগীর মধ্যে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে ৯ জনই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিন-তিনবার ফলোআপ টেস্টে নেগেটিভ আসার পরেই তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে থাকা বাকি দুজন করোনারোগীও সুস্থ হওয়ার পথে বলে জানা যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ চিকিৎসক এম কে আজাদ জানান, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এখন অবধি কোনো মৃত্যু নেই। জেলার দুটি উপজেলায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের কেউই বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা নেননি। তারা চিকিৎসা নিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে।
জানা যায়, গত একমাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা প্রায় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট। বর্তমানেও চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুজন করোনারোগীসহ করোনা-সন্দিগ্ধ আরো আটজন রোগী।
আজ বুধবার ছাড়পত্র পাওয়া ৭০ বছর বয়সী আ. খালেক সিকদার বলেন, তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তিনি বলেন, করোনা রোগের কথা হুইননা প্রথম তো ভয় পাইয়াই গেছিলাম। মনে করছিলাম আর বুঝি বাঁচন নাই। বরগুনা হাসপাতালের ডাক্তার আর নার্সরা মিললা আমারে অনেক সাহস দেছে। কইছে দেকপেন আমনের কিছুই অইবে না। আসলেই আমার কিছুই অয় নায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নার্স জাকিয়া পারভিন সীমা বলেন, বাসায় মায়ের কাছে ছোট বাচ্চাকে রেখে তারপর ডিউটি করে যাচ্ছি। সেবাদানের উদ্দেশ্যেই যখন এ পেশায় নাম লিখিয়েছি তখন পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুভাষ দত্ত বলেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের সেবা করার জন্যই তো এই পেশায় এসেছি। এখনই তো সেই উত্তম সময়। করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক হওয়ায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পুরো দায়িত্ব এখন ডা. মো. কামরুল আজাদের ওপরেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনো চিকিৎসক প্রতি সাত দিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। কিন্তু একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হওয়ায় কোয়ারেন্টিনে যাওয়া হচ্ছে না চিকিৎসক কামরুল আজাদের। একমাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি টানা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডা. কামরুল আজাদ বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মা, অসুস্থ স্ত্রী আর ছোট্ট ছেলে শিশুকে রেখে এ কাজে আসতে প্রথমে অনেক ভাবতে হয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে পেশাগত দায়িত্ববোধের কারণেই চলে এলাম বরগুনায়। সেই যে এসেছি আর যাইনি।
করোনারোগীদের একের পর এক সুস্থ হওয়া প্রসঙ্গে ডা. কামরুল আজাদ বরগুনার সিভিল সার্জন এবং জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সকল স্বাস্থ্যকরমীদের আন্তরিক অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও লক্ষণ দেখে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি এবং সার্বক্ষণিক তাদের নজরদারিতে রেখেছি। করোনার চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর মনোবল বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সময়মত খাওয়াদাওয়া করানো। সম্ভব হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, যাতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।