বরিশাল ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
জিয়া শাহীন / বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। ঢাকার বাইরের একটিশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী তিনি। কাজে যোগ দিয়েছেন ২৫ বছর হল। তার ভাষ্যমতে তিনি যোগ দেয়ার ২ বছর পর স্কুলে একটি টাইপ রাইটার শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে পাঠান হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানের নির্দেশ, এটি যেহেতু অফিসের কাজে ব্যবহৃত হবে, তাই এটি অফিস সহকারীকেই চালাতে হবে। একটু ভিড়মি খাবার দশা। কেননা এতদিন হাতে সব লেখালেখি করতে হয়েছে। টাইপ সম্পর্কে কোন ধারনাও নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও টাইপ জানতে হবে তা উল্লেখ ছিল না। কিন্তু উপায় কি? এরপর নিজ উদ্যোগে সন্ধ্যায় টাইপ রাইটার শেখা। এভাবে গেল প্রায় ১৫ বছর। ২০১২ সালের দিকে মন্ত্রনালয় থেকে দেয়া হল ২টি কম্পিউটার। একটি অফিসে। অপরটি প্রধান শিক্ষকের কক্ষে। একইভাবে অফিস সকারীকে নিজ উদ্যোগে শিখতে হল কম্পিউটার চালানো। টাইপ করা। অপর দিকে শিক্ষা মন্ত্রনালয় শুরু করল কম্পিউটার ট্রেনিং। প্রধান শিক্ষকতো বেটেই, সে প্রশিক্ষণে যাওয়া শুরু হল বাংলা ইংরেজী, বিজ্ঞানের শিক্ষক। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষক বা ক্রীড়া শিক্ষকও বাদ গেলেন না। শুধু বাদ অফিস সহকারী। অথচ তাকে ফরম পুরণ, নিবন্ধন, ইএমআইএস, ব্যানবেইজ সব কম্পিউটারে করতে হয়। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নেয়া হল একজন কম্পিউটার শিক্ষক।হায় তিনি কম্পিউটার ঠিকমত অনও করতে পারেন না।
দিনাজপুরের এক অফিস সহকারী বললেন তার মনের কস্টের কথা। ভাই আমাদের এখনও বলা হয় কেরানি। আমরা আসলে স্কুলের কোন শ্রেণীতে পড়ি তাই জানি না। কোন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে সে ক্লাশ নিতে যেতে হয়। যখন কারো কোন উৎসবে যোগ দিতে চাদা দিতে হয় শিক্ষকদের সমান। এখানে কর্মচারী বলতে ৪র্থ শ্রেণী। কিন্তু কোন অর্থ যদি ভাগ করা হয়, তখন আমি তৃতীয় শ্রেণী। শিক্ষকরা অর্থ বেশি পাবেন।
ফরিদপুরের এক অফিস সহকারী ক্ষোভের সাথেই বললেন, একজন শিক্ষক বেতন পান ১৬ হাহাজর টাকা। তাদের ঈদ বোনাস ৪০০০ টাকা। তিনি ঈদে পেলেন মোট২০ হাজার টাকা। অপর দিকে সারাদিন পরিশ্রম করা এক জন অফিস সহকারীর বেতন ৯৩০০টাকা। তার বোনাস ৪৬৫০টাকা। সর্বমোট ১৩৯৫০ টাকা। এই বিভেদের জন্য শিক্ষকরা প্রতিদিন গলা ফাটাচ্ছেন বৈষম্য বৈষম্য বলে। অথচ এ গলাটুক যদি জাতীয়করণের জন্য ফাটাতেন তা হলে বৈষম্য থাকত না।
বরিশাল বিএম স্কুলের ফিরোজ আহমেদ ক্ষোভের সাথে জানান, একজন শিক্ষক চাকুরীর শুরুতে পান ১২৫০০ টাকা। এরপর ১৬০০০, ২২০০০ স্কেলে উন্নিত হবার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অফিস সহকারীদের শুরু ৯৩০০ টাকা এবং শেষ ৯৭০০ টাকা। এখন অফিস সহকারীদের বেশিরভাগই গ্রাজুয়েট। কিন্তু স্কেল ঐ পর্যন্ত। কোন শিক্ষক সমিতি এ নিয়ে একটি শব্দও উৎচারণ করেন না।
ভোলা সদরের একজন জানালেন, আমাদের কাজের কোন সময়সীমা নেই। কাজ্ওে নির্দিস্ট পরিধি নেই। কাজ আর কাজ। কোন প্রশিক্ষণ নেই। বেতনও নড়েচড়ে না।
অফিস সহকারীদের প্রশিক্ষনের ব্যাপারে আলাপ হয় বরিশালের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তারের উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, আমরা সামনে অফিস সহকারীদের কম্পিউটার ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করব।
অফিস সহকারীদের দাবির ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, জাতীয়করন হলে এসব বৈষম্য থাকবে না। তবে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( এমপিওভূক্ত) অফিস সহকারী কমর্চারী ফেডারেশনের জেলা সভাপতি গাজী আব্দুস ছালাম ক্ষোভের সাথে বলেন, শিক্ষক সমিতিগুলো এখনও ১৪/১৫দফা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যেই ঐক্য নেই। কবে জাতীয়করণ হবে, সে আশায় বসে থাকলে চলবে না। সারা দেশের অফিস সহকারীদের নিজেদেরই তাদের দাবি রিয়ে মাঠে নামার আহবান জানান।