কৃষক কাঁদে লামচরিতে

  • আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২৯ ২০২২, ০৬:৫০
  • 664 বার পঠিত
কৃষক কাঁদে লামচরিতে
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বিধান সরকার ॥ দক্ষিণে কীর্তনখোলা, উত্তরে আড়িয়াল খাঁ। এই দুয়ের বুক চিড়ে জেগে ওঠা চড়ার নাম লামচরি। এর দক্ষিণ লামচরি গাঁওখানির কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া উৎপাদনে বেশ নাম কুড়িয়েছে। এখানে ধানের পর কুমড়া দ্বিতীয় অর্থকারী ফসল। এবার সেখানের কুমড়া ক্ষেতে ভাইরাসের কারণে উৎপাদন গেল বারের তুলনায় বিশ ভাগ কমে এসেছে। গড়ে প্রতি চাষীর লাখ টাকার ক্ষতি ধরলে সাড়ে তিন’শ চাষীর বেলায় অর্ধেকটা হলেও এর পরিমাণ সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দাঁড়ায় বটে। তবে এনিয়ে কোন আক্ষেপ নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সাবিনা ইয়াসমিনের। গেল ২৬ জানুয়ারী তার কাছে মতামত আনতে গেলে খুব সাবলিল উক্তি-‘এটা নিউজ করার মত কোন বিষয়ই না’।
এখানের কৃষকদের বক্তব্য, গেল সাত বছর ধরে তারা হাইব্রীড কুমড়ার চাষ করে আসছেন। ফলনও বেশ পেয়েছেন বিগত ছয় বছর ধরে। যার উপমা টানলেন এবারো ২ একর জমিতে কুমড়া চাষ করা কৃষক হাফিজুল। গেলবার যেখানে ৫-৭ কেজি ওজনের ২ হাজার কুমড়া ফলেছিল, বিক্রি করেছিলেন আড়াই লাখ টাকার কাছাকাছি। সেখানে এবার ভাইরাসের কারণে গাছ হলুদাভো হওয়াতে ফলন কমে গিয়ে মাত্র ২ কেজি ওজনের ১৩০টি কুমড়া বিক্রি করতে পেরেছেন। এখনো ওষুধের দোকানে তার ৩০ হাজার টাকার ওপরে পাওনা। এছাড়া ৪টি বীজ মিলিয়ে ১টি থানা তৈরীতে খরচ হয়েছে ১৩০ টাকার মত। এসময় কৃষক ফারুক হাওলাদার বলেন, তার দেড় হাজার থানার পুরোটাই ভাইরাসের কারণে নষ্ট হয়েছে। গেল ২৩ জানুয়ারী এই কৃষকের কাছে তাদের কষ্টের কথা জেনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদকে জানালে এবং কৃষকের মোবাইল নম্বর দিলে, তিনি ঢাকাতে রওয়ানা করায় দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে ম্যাসেজ করে যান। যার ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা হক ভুক্তভোগী কৃষক ফারুক হাওলাদারকে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। সেখানে ফোন দিলে তিনি লামচরি ব্লকের দায়িত্বরত মাঠ কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ মন্ডলের নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। কৃষক ফারুক হাওলাদার তাকে ফোন দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়া কুমড়া ক্ষেত পরিদর্শণ করে করণীয় বিষয় বাতলাতে অনুরোধ করেন। সেক্ষেত্রে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ মন্ডলের মোবাইলে প্রতিকার ছিল, তিনি অসুস্থ, আর ভাইরাস ধরলে গাছ সব তুলে ফেলেন। কৃষক হায় হায় করে ওঠেন, তার দেড় হাজার থানার গাছ উপড়ে ফেলতে হবে!
অবশ্য চার দিনের মাথায় ২৬ জানুয়ারী দুপুরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন দক্ষিণ লামচরি গ্রামে কুমড়া ক্ষেত দেখতে। তবে সেদিন একজন নয়; তিন জন মাঠ কর্মকর্তা গিয়েছিলেন বটে, সেক্ষেত্রে তাদের অনিহা ছিল ভাইরাস আক্রান্ত কুমড়া ক্ষেত পরিদর্শণে। আর প্রতিকার চাওয়া কৃষক ফারুক হাওলাদের বিস্তর ঠিকানা এমন করে জানতে চেয়েছিলেন তাতে তিনি ভড়কে গিয়েছিলেন, পরামর্শ চেয়ে পাছে কোন অন্যায় করে ফেলেছেন কিনা। তাইতো খেদোক্তি করলেন কৃষক মো. ফয়সাল আহমেদ, পাঁচ বছর ধরে তিনি কুমড়ার চাষ করেন। পাশাপাশি অন্য সব্জির চাষ করলেও এযাবৎ কৃষি বিভাগের কারোর দেখা পাননি।
প্রতি ইউনিয়নকে তিনটি ব্লকে ভাগ করে ৩ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। নিয়ম অনুযায়ী বীজ কেনা থেকে বপন এবং রোগ প্রতিরোধে ওষুধ প্রয়োগে তাদের ব্যবস্থা দেয়ার কথা। তারা এটি যথার্থ করেননা বলে কৃষকরা তাদের ধারণা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির সুযোগ নেন বীজের পর ওষুধ বিক্রি করা বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা। ভাইরাসে আক্রান্ত ক্ষেতের চাষী হাফিজুল বলেছিলেন, তিনি কুমড়ার বীজ বপনের পর জীপসাম, ইউরিয়া, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লোরা, থিওভিট, গ্রোভিন, ওস্তাদ এমন নামের সার এবং ওষুধ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু একের পর এক গাছ হলুদাভ হওয়া থেকে রক্ষা পায়নি তার ক্ষেত। আক্ষেপ করেন, ধানের পর তাদের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকারী ফসল হাইব্রীড কুমড়া। এই কুমড়া বিক্রির টাকাতেই স্বপ্ন দেখেন অনেকটা পুরো বছর চলার। সেই স্বপ্ন এবার ধুলিস্মাৎ হওয়া উল্টো ভালে চিন্তা রেখা ক্ষেত সাজাতে ধারের টাকা শোধ করবেন কিভাবে?
নিয়ম অনুযায়ী মধ্য আশি^ণ থেকে কার্তিকের শুরু হয়ে পৌষ মাস অবধি কুমড়ার বীজ বপন করেন। আগে সনাতনী পদ্ধতির কুমড়া বীজ বপন করলেও সাত বছর হলো তারা হাইব্রীড বীজ বপন করছেন। এক্ষত্রে সিনজেন্টা কোম্পানীর আশা, আলো, নতুবা এসিআই কোম্পানীর ঢাকা-১ বা ব্যাংকক-১ বীজ বপন করে থাকেন। এরমধ্যে এসিআই কোম্পনীর বীজে ফলন বেশ অসে এবং বাজার দরও অন্য বীজের ফলের চেয়ে কেজিতে ৪/৫ টাকা বেশী পাওয়া যায়। গেল বছর এসিআই কোম্পানীর বীজের চাহিদা বেশী থাকায় প্যাকেট প্রতি ৪’শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ফলন ভালো দামও ভালো পাওয়া যায় এই আশায় এবছরও এসিআই কোম্পানীর বীজ বপন করেছিলেন। কৃষকরা জানায় এবছর এসিআই কোম্পানীর বীজের দাম নেমেছিল অর্ধেকে। আর এই বীজ লাগানো ক্ষেতেই ভাইরাসের আক্রমণ বেশী দেখা দিয়েছে। এনিয়ে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বীজ বপনের আগে কৃষক তা ছত্রাক নাশক দিয়ে শোধন করেছিলেন কিনা সেটা দেখতে হবে। আর কোন কোম্পানীর বীজ বপন করেছে তার গুনগত মানের ঘাটতি ছিল কিনা তা দেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন তারা। তবে তারা ভাইরাস বহনকারী পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন কৃষকদের। আর লামচরী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অসুস্থতার কথা তিনিও জানালেন। তবে এর বিপরীতে অফিসিয়াল প্রমাণপত্র উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসুস্থ হওয়াতে (২৬ জানুয়ারী) অফিসে আসেননি বলে তা দেখাতে পারেননি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান। আর একই দিন অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারী বুধবার উপপরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদের ঢাকা থেকে ফিরে অফিস করার কথা থাকলেও বেলা সাড়ে এগারোটা অবধি তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। তার পরিবর্তে দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপরিচালক সাবিনা ইয়াসমিনের বক্তব্য ছিল স্যার ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে বরিশালের পথে আছেন। তা কৃষক প্রতিকার চাওয়ার তিন দিন পাড় হয়ে চার দিনে গড়ালে কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা সরেজমিনে দক্ষিণ লামচরির কুমড়া ক্ষেত পরিদর্শনে যায়নি, এমনটা জানালে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জানতে চান-‘সামান্য একটা ঘটনা এটি নিউজ করার মত বিষয় কিনা’? অতিরিক্ত উপরিচালক সাবিনা ইয়াসমিনের উক্তির বিষয়ে বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি খোন্দার মনিরুল আলম বলেন, সরকার যখন দশ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছেন তাতে কৃষকের এক টাকা ক্ষতিও যথেষ্ট বিষয়।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
ছুরি-ব্লেড দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন মিল্টনপ্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস: শিক্ষামন্ত্রীজনগণের আস্থাহীন সেনাবাহিনী রণাঙ্গণে জয়ী হতে শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কউত্তাল নথুল্লাবাদআনারস ও মটর সাইকেল প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার, উজিরপুরে মিষ্টি বআমাকে উৎখাত করলে পরবর্তীতে কে আসবে, প্রশ্ন প্আইপিএল ছেড়ে দেশে ফিরতে হবে মুস্তাফিজকে!ইডেনের গ্যালারিতে বসেই ধূমপান, প্রবল সমালোচনআরো ১১৮ বুদ্ধিজীবীর তালিকা দিল মুক্তিযুদ্ধ মঢাকার বস্তির বেশিরভাগ মানুষ বরিশালেরভারতে উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ
%d