পৃথিবীর নতুন মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া

  • আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ০৭ ২০১৯, ০৪:৫৬
  • 1034 বার পঠিত
পৃথিবীর নতুন মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া
সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্কুলেই ভর্তি হলেই মাস্টারমশাইরা কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করান। এরমেধ্যে অন্যতম পৃথিবীর সাত মহাদেশের নাম। তাইতো সবারই জানা নাম- এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকা। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন মাস্টারমশাই ভুল শিখিয়েছেন বা শেখাচ্ছেন আমাদের! পৃথিবীতে আটটি মহাদেশ! অষ্টমটির নাম- জিল্যান্ডিয়া।

বিজ্ঞানীদের সন্ধান পাওয়া নতুন এই বিস্তৃত এলাকা লুকিয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে! বর্তমানে মহাদেশটির প্রায় ৯৩ থেকে ৯৪ শতাংশ রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে নিমজ্জিত। নিউজিল্যান্ড এই মহাদেশের পানির ওপরে থাকা একমাত্র অংশ। বলা যেতে পারে, এই মহাদেশের পর্বতচূড়া। বাকি সবটুকু পানির নিচে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা এই ‘মহাদেশ’টির নাম দিয়েছেন জিল্যান্ডিয়া। আকারে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান।

কীভাবে আবিষ্কার হলো এই মহাদেশ

১৯৯৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ব্রুস লুয়েন্ডিক ‘জিল্যান্ডিয়া’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৬০ সালে সমুদ্রের নিচে তেলের খনি অনুসন্ধানের সময় এই মহাদেশের অস্তিত্ব খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। তারপর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আরো বিস্তৃত গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এ সময় বিজ্ঞানীদের হাতে এমন কিছু তথ্য আসে যার উপর ভিত্তি করে তারা জিল্যান্ডিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

নিউজিল্যান্ডের জিএনএস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় উঠে আসে মহাদেশটি সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য। সমুদ্র তলদেশ থেকে প্রায় ১২ হাজার ২১৭ ফুট উচ্চতায় এই মহাদেশের অবস্থান। খুবই সম্পদশালী এই মহাদেশ। এর সমুদ্রের নিচে রয়েছে বিপুল পরিমাণের জীবাশ্ম জ্বালানি, যা পৃথিবীর ভবিষ্যতের দীর্ঘ সময়ের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এর মূল্য হবে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। শুধু তাই নয়, ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার চেয়ে একেবারেই আলাদা হবে এই জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ।

মানচিত্রে জিল্যান্ডিয়া

মানচিত্রে জিল্যান্ডিয়া

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয় ছয় থেকে আট কোটি ৫০ লাখ বছর আগে। পরবর্তীতে ১৩ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ও অ্যান্টার্কটিকা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ২৩ কোটি বছর আগে সম্ভবত মহাদেশটি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ছিল। বর্তমানে মহাদেশটির সিংহভাগই প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে নিমজ্জিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় ভূখন্ডাংশ বা অনুমহাদেশ যার আয়তন প্রায় ৪৯,২০,০০০ কিলোমিটার।

এখনো স্বীকৃত নয় কেন?

জিল্যান্ডিয়া যেহেতু পানির নিচেই বেশিরভাগ নিমজ্জিত, তাই এটির মহাদেশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই; এটি অনেকের ধারণা। কেননা পানির উপরে অবস্থিত হওয়া মহাদেশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভূবিজ্ঞানীদের মতে, কোনো বিশাল ভূখণ্ডের মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবার জন্য মূলত চারটি গুণাবলি থাকা প্রয়োজন-

* আশেপাশের অন্যন্য অঞ্চল থেকে উঁচু হতে হবে;
* সুস্পষ্ট কিছু ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে;
* একটি সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে হবে ও
* সমূদ্র তলদেশের চেয়েও পুরু ভূ-স্তর থাকতে হবে।

ভূবিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, জিল্যান্ডিয়ার মধ্যে এই সকল গুণই বিদ্যমান। জিল্যান্ডিয়ার কিছু মাটি ও পাথরের নমুনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। এর মাটির সঙ্গে মহাদেশ ভিত্তিক যে ভূখণ্ড রয়েছে তার আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে। কিন্তু সমুদ্রের তলদেশের গঠনের সঙ্গে এই মাটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ১১ জন ভূতাত্ত্বিকের দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল এই যে, একটি মহাদেশ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান জিল্যান্ডিয়ার।

জিল্যান্ডিয়ার ভূখণ্ড

জিল্যান্ডিয়ার ভূখণ্ড

জিল্যান্ডিয়াকে বৃহৎ এবং সমন্বিত এলাকা হিসেবে এখনো বিবেচনা করা যায় না। এর অর্থ দাঁড়ায়, জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে দাবি করা যায় না। এমন যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন একদল গবেষক। কিন্তু সম্প্রতি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং সমুদ্র তলের মাধ্যাকর্ষণ মানচিত্র ব্যবহার করে জিল্যান্ডিয়াকে একটি সমন্বিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমুদ্রের প্রায় তিন হাজার ২৮০ ফুট নিচে নতুন এই মহাদেশটির সীমারেখা দেখতে পাওয়ার পর থেকেই তার উপর ভিত্তি করে ভূতাত্ত্বিকগণ জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে মেনে নেয়া যায় বলে জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানী হামিশ ক্যাম্পবেল ২০০৭ সালে তার প্রকাশিত হওয়া ‘ইন সার্চ অব এনশিয়েন্ট নিউজিল্যান্ড’ শীর্ষক বইয়ে নতুন এই মহাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগে পুরো জিল্যান্ডিয়া মহাদেশটিই জলের তলায় ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে প্লেট মুভমেন্টের ফলে জলের উপরে উঠে আসে নিউজিল্যান্ড। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড এবং প্রশান্ত মহাসাগরের আরো একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ফরাসি উপনিবেশ নিউ ক্যালিডোনিয়ার মধ্যবর্তী অংশেই জিল্যান্ডিয়ার অবস্থান।

অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, হয়তো পাঠ্যপুস্তক রচয়িতারা কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু বাস্তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ভূখণ্ডকে মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক ফোরাম বা সংস্থারই অস্তিত্ব নেই। তাই জিল্যান্ডিয়া পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ কি-না, সেটি কোনো ফোরামের ঘোষণার উপর নির্ভরশীল নয়। বরং এটিকে সময়ের উপরই ছেড়ে দিতে হবে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
বিশ্বকাপে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অনন্য কীর্রিকশাওয়ালা-দিনমজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধআগামীতে কোনো প্রকল্পে ‘শেখ হাসিনা’ নাম না রাববি শিক্ষার্থীরা একদিন সারা দেশের নেতৃত্ব দেনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আজিজ মোহাম্মদসারা বিশ্বে এমআর-৯, মুক্তি পাবে চীনেওভোলায় মেঘনার চরের দখল নিয়ে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষধান কাটার মৌসুমের কারণে ভোট কম পড়েছে: সিইসিফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে দরকার মুসলিম দেছুরি-ব্লেড দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন মিল্টনপ্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস: শিক্ষামন্ত্রীজনগণের আস্থাহীন সেনাবাহিনী রণাঙ্গণে জয়ী হতে শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কউত্তাল নথুল্লাবাদআনারস ও মটর সাইকেল প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্
%d