বরিশাল ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফলের বগা বাজার ১৫ এপ্রিল পুলিশের জব্দকৃত ৪২ টন সরকারি চাল পটুয়াখালীর বাউফলের এবং বরিশালের হিজলা উপজেলার কাবিখা (কাজের বিনিময় খাদ্য) প্রকল্পের বলে প্রমাণ মিলেছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি বা সিপিসিরা এসব চাল কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়। ওই চাল ট্রলারে বাউফলের বগা বাজারের একজন ব্যবসায়ীর গোডাউনে লোড করার সময় পুলিশ হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং এর সাথে জড়িত চালের ক্রেতা শাহাজাহান (৩৫) ও ট্রলার মালিক জয়নাল চৌকিদারকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। বগা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাব ইন্সপেক্টর মাধব চন্দ্র দে বাদি হয়ে ওই দিন বাউফল থানায় এ ব্যাপারে ধৃত শাহজাহান ও জয়নালের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। বগা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মহিব্বুল্লাহ মামলাটি তদন্ত করছেন।
প্রথমে ধারনা করা হয়েছিল এগুলো ত্রাণের চাল কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এগুলো বিভিন্ন এলাকার কাবিখা প্রকল্পের চাল যা কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানান গেছে, বগা বাজারের শাহজাহান একজন চাল ব্যবসায়ী এবং বাজারে তার চালের আড়ৎ ও গোডাউন রয়েছে। ট্রলারে করে সরকারি খাদ্য বিভাগের সীলমোহরকৃত বস্তাভর্তি এ চাল বরিশালের হিজলা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কাবিখা প্রকল্প সমূহের সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ওই এলাকার সেলিম কিনেছেন্ পরবর্তীতে সেলিমের কাছ থেকে কিনেছে বলে পুলিশের হাতে আটককালে শাহজাহান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
শাহজাহানের এ তথ্য যাচাই করে এর সত্যতাও মিলেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুর্যোগ ও ত্রান শাখা থেকে বিভিন্ন তারিখে ইস্যুকৃত ডিও (ডেলিভারি অর্ডার)‘র ১২ টি কপি আমাদের হাতে রয়েছে। এসব ডিও‘র কপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের সদস্য আঃ খালেক খান দু‘টি কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি এবং ওই দু‘প্রকল্পে ৮ মে. টন করে মোট ১৬ মে. টন চাল বরাদ্দ করা হয়। ওই চালের মধ্যে তিনি ২ মে. টন করে উভয় প্রকল্পের মোট ৪ টন এ চক্রের কাছে বিক্রি করেন।
সবচেয়ে বেশি চাল বিক্রি করেছেন ওই ইউনিয়নের আরেক সদস্য হামিম মাতবর। তিনি পূর্ব খাগের চর শহিদ বেপারি বাড়ির পূর্ব পাশ থেকে হাকিম হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পূননির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি এবং ওই প্রকল্পে বরাদ্দকৃত মোট ৯ টন চালের সবটুকু চারটি পৃথক ডিও’র মাধ্যমে এ চক্রের কাছে বিক্রি করেছেন।
এ ছাড়াও, একই ইউনিয়নের সদস্য আঃ লতিফ মৃধা ২ টি প্রকেল্পর মোট ৬ টন, একই উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সদস্য জয়নাল আবেদীন সাড়ে ৪ টন, কামাল সরদার দু‘টি প্রকল্পের মোট ৬ টন, হরিনাথপুরের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল রাড়ি ২ টন।
পটুয়াখালী বাউফল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ বগা বন্দরে অভিযান চালিয়ে বাজারের উত্তর পাশের গলিতে শাহজাহান নামের এক চাল ব্যবসায়ীর গোডাউনে ট্রলার থেকে লেবাররা চাল ওঠানোর সময় ৪২ টন চাল জব্দ করা হয়। বস্তায় খাদ্য অধিদপ্তরের সীল রয়েছে যাতে লেখা রয়েছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বগা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মহিব্বুল্লাহ জানান, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলাটি যেহেতু এখনও তদন্তাধীন তাই তিনি এ ব্যাপারে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয়দের মন্তব্য প্রকৃত দোষী দুর্নীতিবাজ কাবিখা প্রকল্প সমূহের সভাপতি, চেয়ারম্যান ও মেম্বররা ধরা ছোয়ার বাইরে ….।