বরিশাল ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
জিয়া শাহীন ॥ সবার ভাগ্যে এমন মানুষের সান্নিধ্য সব সময় মেলে না। আমার মিলেছিল? কিভাবে বা কেন তার বিষদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তবে আমি জীবনে বোধহায় ২/১টা ভাল কাজ করেছি যার জন্য তারমত মানুষের কাছাকাছি থাকতে পেরেছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সাংবদিকতার কারণে অনেক রথি মহারথির কাছাকাছি যাবার সৌভ্যাগ্য হয়েছে, এক টেবিলে খাবারও খেয়েছি, গাড়িতে ঘুরেছি। ব্যাস ঐ পর্যন্ত, প্রয়োজন হলে তারা ডেকেছেন, না হলে ভুলে গেছেন। কিন্তু ডাঃ আনোয়ারের কাছ থেকে যে স্নেহ ভালবাসা পেয়েছি তা যেন অফুরান। দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার দায়িত্ব নেবার পর থেকেই তার সাথে পরিচয়। এরপর চাকুরি ছেড়েছি, কিন্তু সম্পর্ক ছাড়িনি। প্রতিরাতে পলি ক্লিনিক থেকে ফোন দিতেন, শাহিনভাই, আজ কি খবর। একটু সময় পেলেই ডেকে নিতেন। পলির চারতলার রুমে বসে কথা হত। এরপর ২য়বারেরমত আবার এলাম দক্ষিণাঞ্চলে। সেখান থেকে বরিশাল আজকালে। অনেকটা বছর ভাগ্যগুনে তার সৎসংগ পেয়েছি। এরপর অন্য পত্রিকায়। কিন্তু কাছছাড়া হয়নি। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও তার সাথে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে বসে কথা হয়। হয়ত মন বোঝেনি, এরপর কিছু ঘটবে। সোমবার দুপুরে জে খান স্বপনের আর্তনাদ শুনেই ছুটে গিয়েছিলাম হাসপতালে। দেখি ৮ তলাই সবাই পিপিই /মাক্স পড়া। আর আমি শুধু মাস্ক পড়েই ছুটে এসেছি। আমার যে প্রিয় স্যারকে দেখতে হবে। এক নজর হলেও। কিসের মাক্স, কিসের পিপিই। ঐ অবস্থায় ঢুকে পড়লাম তার রুমে। মিট মিট করে একবার দেখলেন। এরপর নিজে বসে পিপিই পড়লেন। অক্সিজেন সিলিন্ডারের দিকে চেয়ে বুকটা কেপে উঠল। অক্সিজেন নেয়ার পাসেন্টিজ ৬৬%। যা থাকার কথা ৮০ভাগের উপরে। সামনে এসে বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। চোখের কোণে পানি জমলেও তা কাউকে বুঝতে দিলাম না। হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এলাম। চলে এলাম বাসায়। তার বিদায় পর্বটা যে দেখতে পারব না। বাসায় বসেই শুনলাম হেলিকক্টারটা চলে যাচ্ছে। এবার মনে হলে হৃদয়টা থেকে আমার রক্ষক্ষরণ শুরু হয়েছে। ফিরে পাবতো আমার স্যারকে? আর্তনাদই বাস্তবে রূপ নিল। পেলাম না।
ডাঃ আনোয়ারের মধ্যে আমি অসীম তেজ দেখেছি। পারব না কথাটি তার মধ্যে ছিল না। এই অসম্ভব জেদই তৈরি করেছে রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল। প্রথমে অনেকে বলেছিলেন, এতবড় হাসপাতাল চালিয়ে রাখা সম্ভব না। কিন্তু তিনি একা সেটা করে দেখিয়েছেন। বিশ্বাস, মনোবল আর সততা রাহাত আনোয়ার হাসপাতালটিকে দক্ষিনাঞ্চলের সেরা হাসপতালে পরিনত করেছে। তিনি ছিলেন অসম্ভব মানবিকও। তার এই গুনটির কারনে আজ বরিশালবাসী তাকে হারানোর ব্যাথায় কাঁদছে। বিএনপি নেতা এ্যাড. আলী হায়দার বাবুল বেশ কিছুদিন ভর্তি ছিলেন রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে। গতসপ্তাহে তিনি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার ফেইসবুক পোষ্টে লিখেছেন “ ডাঃ আনোয়ারের চিকিৎসা সেবার কারনে আজ আমি সুস্থ্য”। টাকার জন্য তার হাসপাতালে কোন রোগির চিকিৎসা হয়নি, এমনটা বোধহয় তার শত্রুও বলতে পারবে না। একজন বিরল শিক্ষানুরাগীও তিনি। বিরল শব্দটা এখানে ব্যবহার করলাম এই কারনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির হবার জন্য অনেকই তীব্র প্রভাব খাটান। তারপর প্রতিষ্ঠানের তহবিলে হাত বাড়ান। ডাঃ আনোয়ার হোসেন তার নিজ বাড়ি ঝালকাঠীর মানপাশায় মানপাশা স্কুলের ৫০ লাখ টাকা খরচ করে ভবন তৈরি করে দিয়েছেন। বরিশালের কর্নকাঠী স্কুলের সভাপতি ছিলেন। সেখানেও লাখ লাখ টাকা দান করেছেন। এ মানুষটি শুধু দিয়েই গেছেন। বরিশালের খুব কম সংগঠন আছে যারা তাদের অনুষ্ঠানের জন্য তার কাছ থেকে চাঁদা নেননি। প্রতি ঈদ কোরবানীতে পত্রিকার হকারদের দিতেন আর্থিক উপহার। এমন একজন মানুষকে হারালাম। বরিশালবাসী হারালো। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কাঁদতে পারিনা। চোখ বঝলেই শুনি, তার ডাক। শাহীনভাই “ আজকের খবর কি? তাই চিৎকার করে বলি, খোদা অসম্ভব ভাল মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষটিকে জান্নাতবাসী কর।