বরিশাল ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার মতো এক যুগান্তকারী সামরিক ঘটনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ আঙ্কারার সঙ্গে ঢাকার একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। যার আওতায় অত্যাধুনিক এসআইপিইআর দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও তুরস্কের সক্ষমতা-প্রমাণিত যুদ্ধ-ড্রোন হাতে পেতে চলেছে ঢাকা। এতে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার মতো এক যুগান্তকারী সামরিক ঘটনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। খবর দৈনিক মানব জমিনের।
প্রাথমিকভাবে এটিকে কেবল একটি অস্ত্র চুক্তি মনে হলেও, বাস্তব প্রেক্ষাপটে এটি আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোর মাঝে সুকৌশলে নিজেদের পথ তৈরি করে নেয়া একটি জাতির স্বাধীনতার সাহসী সামরিক অঙ্গীকার। বাংলাদেশের জন্য এটি তার ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার প্রশ্ন, অন্যদিকে তুরস্কের জন্য এটি বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেদের সামরিক-শক্তির কৌশলী প্রদর্শনী। আর প্রতিবেশী ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে এটি এক নতুন, অপ্রত্যাশিত এবং নিরন্তর কৌশলগত মাথাব্যথার জন্ম দিয়েছে।
তুরস্কের কাছ থেকে উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম কেনার এই উদ্যোগটি কোনো খেয়ালি বিষয় নয়, বরং বাস্তব ও সরাসরি হুমকির অনিবার্য জবাব। ঢাকা আর তার আকাশসীমার অরক্ষিত দশা উপেক্ষা করতে পারছে না।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলেছে। চীন ও রাশিয়ার তৈরি সামরিক বিমান ঘন ঘন বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। এমনকি মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া আর্টিলারি শেলও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছে। প্রতিটি ঘটনা ঢাকার সরকারের ওপর তীব্র রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। যা প্রমাণ করে নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষিত করা এখন জরুরি। সমস্যা হলো, কার্যকরভাবে এই সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
এখানে প্রতিবেশী ভারতের শক্তিও একটি ফ্যাক্টর। দেশটির বিশাল সামরিক সক্ষমতা বাংলাদেশের দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক স্থিতিশীল, তবুও কোনো সামরিক পরিকল্পনাকারীই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিশাল গুণগত ও সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্ব উপেক্ষা করতে পারেন না। তাই সামরিক আধুনিকীকরণের এই প্রচেষ্টা দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করে। এক. মিয়ানমার থেকে আসা তাৎক্ষণিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরক্ষা তৈরি করা। দুই. শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অসামঞ্জস্যতাকে সূক্ষ্মভাবে পুনর্বিন্যাস করা।
তুরস্কের এই প্যাকেজটি প্রায় নিখুঁত সমাধান এনে দেবে। মধ্যম পাল্লার হিসার-ও প্লাস এবং দূরপাল্লার এসআইপিইআর সিস্টেমের সংমিশ্রণ কেবল ঘাটতিই পূরণ করবে না, এটি একেবারে শুরু থেকে একটি আধুনিক, সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ঢাল তৈরি করবে।
দীর্ঘমেয়াদে ড্রোন উৎপাদন সুবিধাটি সম্ভবত আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি চিরস্থায়ী অস্ত্র ক্রেতা হওয়ার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার বাংলাদেশের তীব্র আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার নিজস্ব মানবসম্পদ এবং শিল্প ভিত্তির ওপর বিনিয়োগ করছে। এটি আত্মনির্ভরশীলতার দিকে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ, যা ঢাকাকে ভবিষ্যতে নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং হামলার সক্ষমতার জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেবে