বরিশাল ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শাকিব বিপ্লবঃ বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে ঘুরেফিরে আলোচনায় থাকা আকন পারভেজ বিপ্লব এবার নিজেকে নিয়ে গেলেন প্রশংসার নতুন মঞ্চে। করোনা প্রতিরোধ ও গনসচেতনতায় নিজস্ব পরিকল্পনায় বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর গোপনে ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দায়বদ্ধতায় সৃষ্টি করলেন অনন্য এক নজির। নিজেই সিএনজি চালিয়ে রাতের আঁধারে দলীয় বেকারগ্রস্ত নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তুলে দিয়েছেন উন্নতমানের ত্রাণ সামগ্রী। এই দৃশ্যপট নিজ দল তো বটেই, অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর করোনা নিয়ে কার্যক্রমের আলোচনা ছাপিয়ে বিপ্লব হয়ে উঠলেন নতুন এক আইডল। বরিশাল যুবদল সভাপতির করোনা নিয়ে এই ভাবনা অনুকরণ বা অনুসরণ করেছে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাদের নিজস্ব এলাকায় একই আদলে এধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বরিশালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চারিদিকে উৎকন্ঠাময় পরিবেশে অনেকটা হঠাৎ করে জেগে ওঠে পারভেজ আকন বিপ্লব। কাউনিয়ার নিজ বাড়ি আকন ভিলার পাশ্ববর্তী একটি সুউচ্চ ভবনে দাড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে এই মরণঘাতী ভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম ধাপে গণ সচেতনতায় করনীয় দিকসমূহ আলোকপাত করে প্রশংসা কুড়ান। পরবর্তীতে ১০ এপ্রিল তার ফেইজবুক আইডিতে ত্রাণ সহায়তা দিতে তার উদ্যোগের কথা জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। আবেগঘন লেখার মধ্যে ছিলো তার দল বিএনপির নেতা কর্মী সহ যেকোনও মানুষ ত্রাণ নিতে চাইলে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এরপরই শুরু হয় বিপ্লবের ত্রাণ বিষয়ক গোপন কার্যক্রম। বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা তার সাথে যোগাযোগ শুরু করে এবং ত্রাণের আকুতি জানায়। তার ঘনিষ্ট একটি সূত্রের দাবী , ত্রাণের জন্য আবেদনকৃতদের সংখ্যা যেমন দীর্ঘ তার চেয়েও বিস্ময়কর এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা ত্রাণের জন্য লজ্জায় প্রকাশ্যে আসতে নারাজ। কৌশলী যুববয়সী এই রাজনীতিবিদ সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করে একাকী একটি সিএনজি ভর্তি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তা নিজেই চালিয়ে পৌঁছে যান এইসব ব্যাক্তিদের বাড়িতে।
গভীর রাতে তার সিএনজি সড়কে নামায় প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ে। পরে যখন তার উদারতার কথা পুলিশের কর্তা থেকে সদস্যরাই আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন এবং নিরাপত্তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা সংগঠনের সভাপতি এই যুবক সঙ্গত কারনে সর্ব মহলে পরিচিতি থাকায় নিজের মুখ ঢেকে প্রথম পর্বে বেকার হয়ে ঘরে রয়েছেন, এমন নেতা-কর্মীদের নাম ঠিকানা ধরে তাদের বাড়ির দরজায় উপস্থিত হয়ে দিয়ে আসেন চাল-ডাল-তেল-সাবান-হ্যান্ড স্যানিটাইজার-মাস্কসহ অন্তত ১০ দিন চলার মতো খাদ্যসামগ্রী।
শুধু তার নিজ এলাকা কাউনিয়াই নয় , এরপর সীমানা বিস্তৃতি ঘটে গোটা শহরের অনাচে-কানাচে থাকা তার কাছে আবেদনকৃত ব্যক্তিদের ঠিকানায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান। পরিস্থিতি এমন দাড়ায়, মধ্যরাত থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করায় একপর্যায়ে রাতের আধার কেটে গেলে তিনি নিজেকে আড়াল করতে ঘরে ফিরে ভিন্ন পোশাকে আবার মাঠে নামেন। সূত্র জানায়, বিএনপি দলীয় বেকারের তালিকায় থাকা অন্তত পৌনে ৪ শত নেতাকর্মী তার ত্রাণ দুই দফা হাতে পেয়েছেন। সেই সাথে নির্দলীয়’র সংখ্যা দাড়িয়েছে সহস্রাধিক।
দিন যত বেড়েছে তার কাছে আবেদনের সংখ্যা ততোই বেড়েছে। ঈদের ২ দিন পূর্বে আবার তিনি সিএনজি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। এবারের উদ্দেশ্য সেমাই-চিনি ও পোলাউর চাল ও দুধ পৌঁছে দেয়া। নিজের চিন্তার আলোকে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তা চিহ্নিত করে প্রায় ৯শ ব্যাক্তির দরজায় তিনি উপস্থিত হন এই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে। জিন্স প্যান্ট ও টি শার্ট পরিহিত এবং পায়ে কেডস, আপাদমস্তক ওয়েস্টার্ন স্টাইলের যুবক আকন পারভেজ বিপ্লবের সিএনজি চালকের আসনে বসে ত্রাণ বিতরনণর দৃশ্য সঙ্গত কারনে তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
অবশ্য দূর্যোগের প্রথম দিকে এই যুবক কাউনিয়া এলাকায় সর্বসাধারনের জন্য সড়কধারে বেসিন বসিয়ে হ্যান্ডওয়াশ রেখে সুযোগ পেলে হাত ধোওয়ার অনুরোধ রেখে সচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। কথা উঠেছিলো , ১হাজার মানুষের মাঝে যে ত্রাণ দিয়েছেন সেই অর্থের উৎসমূল কোথায়? বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে এমন প্রশ্নের উদ্ভব ঘটায়। এর জবাবে আকন বিপ্লব নিরব থাকেন এবং সময়সাপেক্ষে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেন । ততক্ষণে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, তিনি দলীয় কোনো সহায়তা নেননি। এমনকি নিজের বন্ধু সার্কেলকেও এর সাথে যুক্ত করেননি। তার স্ত্রী পপি বেগমের সঞ্চিত কিছু অর্থ এবং তার এক বোন এই ত্রাণ সহায়তা দিতে তাকে উৎসাহিত করে এবং অর্থের যোগান দেয়।
আকন বিপ্লব’র কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো দিনে নয়, রাতে কেনো ত্রাণ দিতে মাঠে নামলেন ?এর প্রতিউত্তরে তিনি যা জবাব দিলেন তা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হিসেবে উঠে আসে উমর (রাঃ) গোপনে মানুষকে সহায়তা করার সেই খিলাফতের যুগের কথা । তার সহধার্মিনী পপি বেগম ইসলামের এই পথ প্রদর্শকের অনুসরন করার পরিকল্পনা বাতলে দেন। কিন্তু বিপাকে পড়েন তার ত্রাণ সামগ্রী বহনে কোনো সিএনজি চালক মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধা দেয়ার ভয়ে। পাশাপাশি বিএনপির আলোচিত নেতা হিসেবে প্রতিপক্ষের হামলার বিষয়টিও এক্ষেত্রে সিএনজি চালকরা বিবেচনায় এনে নিজেদের অপারগতা জানান।
কিন্তু তাতে থেমে থাকার লোক নয় বিপ্লব। প্রাইভেট ও মোটরসাইকেল চালানোর পূর্ব অভ্যেস থাকয় নিজেই একটি সিএনজি নিয়ে রাতের আধারে বরিশালের মাঠে নেমে দূর্যোগে রাজনীতি নয়, জানিয়ে দিলেন সামাজিকতার দায়বদ্ধতা থেকে অগ্রসর হতে কোনো বাধা অন্তরায় হতে পারেনা। এমন অভিমত ব্যাক্ত করে বর্তমানে পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি একসময়কার বরিশাল কলেজের ভিপি পারভেজ আকন বিপ্লব জানান, তার ত্রাণ দেয়ার কৌশল কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনার আলোকে বিশেষ করে তারেক জিয়ার নির্দেশনা পালন করেন। কিন্তু মাঠে নেমে তার কৌশল অনুকরন তথা আইডলে রূপ নেয়। জানা গেছে , বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ভিডিও কনফারেন্সে প্রায় ত্রাণ তৎপরতায় কে কেমন ভূমিকা রাখলেন তা নিয়ে আলোচনায় বিপ্লবের কৌশল প্রশংসিত হয় এবং অপরাপর নেতারা তাদের নিজ এলাকায় তা অনুসরন করেন । এক্ষেত্রে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলম বেশী মাত্রায় পুলকিত হন এবং দেশের অন্যাণ্য বিভাগীয় শহরের নেতাদের বিপ্লবকে অনুসরন করার নির্দেশনাও দেন বলে দলীয় একটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সঙ্গত কারনে বরিশালের বিপ্লব ঢাকায়ও আলোচিত করোনার এই দূর্যোগে ব্যতিক্রমী ভূমিকা রেখে। ফলে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপ্লবের ত্রাণ তৎপরতা আলোচনায় আসাটাও ছিলো স্বাভাবিক। বিশেষ করে এধরনের কোনো নেতা একাকী সিএনজি চালিয়ে ত্রাণ দেওয়ার চমকীয় দৃশ্যে পুলকিত হয়েছে, লজ্জিত হয়েছেন নিজেদের ব্যর্থতায়। কারও কারও অভিমত, অনেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ দিয়েছেন কিন্তু বিপ্লবের মতো উন্নতমানের সামগ্রী দিতে পারেননি। তদ্রুপ তার কৌশলও ছিলো অন্যান্যদের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। জানা গেছে বরিশাল বিএনপিতে ত্রাণ বিতরনে বিপ্লব যে ধারার সূচনা করেছেন তা এখন অব্যাহত রেখেছেন তার নেতা সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার