আটক কি‌শো‌রের রহস্যজনক মু‌ক্তি‌তে আট‌কে গেল সোনিয়া মৃত্যু রহস্য - The Barisal

আটক কি‌শো‌রের রহস্যজনক মু‌ক্তি‌তে আট‌কে গেল সোনিয়া মৃত্যু রহস্য

  • আপডেট টাইম : মে ৩০ ২০২০, ২০:৩৭
  • 763 বার পঠিত
আটক কি‌শো‌রের রহস্যজনক মু‌ক্তি‌তে আট‌কে গেল সোনিয়া মৃত্যু রহস্য
সংবাদটি শেয়ার করুন....

শাকিব বিপ্লবঃ বরিশাল শহরতলীর কাশীপুরের সাড়শি গ্রামে কিশোরী সোনিয়া আক্তার আত্মহত্যা করেছে , এ দাবী এখন আর ধোপে টিকছে না। তাকে কৌশলে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো, নিহতের পরিবারের এমন দাবীর ক্রমান্বয়ে প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। একাকী ঘরে থাকা সোনিয়ার মৃত্যুপূর্ব দুই কিশোর শান্ত ও নাহিদের ঐ বাড়িতে রহস্যজনক উপস্থিতি এবং মৃতর দেহে আঘাতের কিছু চিহ্ন তাকে হত্যার দাবীকে জোরালো করে তুলেছে। মাদরাসাপড়ুয়া এই ছাত্রীকে উত্যক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত বিশেষ করে শান্তকে পুলিশ আটকের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় সোনিয়ার পরিবার তাকে গ্রেফতারে সহায়তা করেছিলো। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাগাশুরা গ্রাম থেকে সোনিয়ার মামার দেয়া খবরের ভিক্তিতে এসআই দীপায়ন বড়াল তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসার ঘন্টাদুই পরেই তাকে ছেড়ে দেয়। কি কারনে তাকে ছেড়ে দেয়া হলো এবং হত্যার প্ররোচনার মামলা নেয়া হলোনা কেনো? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিশের এই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবী, শান্তকে পুলিশ ভিন্ন এক ধারা উপস্থাপন করে মুক্তি দিয়েছে। সেই সাথে অপর কিশোর নাহিদকেও এই ঘটনা থেকে দূরত্বে রাখার পুলিশ কৌশল নিয়েছে।
পুলিশেরই একটি সূত্র এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার এবং নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নাম প্রকাশে অপারগতার শর্তে জানান, গত বৃহস্পতিবার শান্তকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পর ওসি তদন্ত শাহ মোঃ ফয়সালের রুমে দীপায়ন বড়াল দীর্ঘক্ষণ একান্তে বৈঠক করে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ বিন আলমকে ম্যানেজ করে ঐ কিশোরের মুক্তির দেয়ার পথ খুঁজে পায়। এসময় নাহিদকেও নিয়ে আসা হয়েছিল। উভয় কিশোর থানা থেকে মুক্তি লাভের পর এই মামলা নিয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ নিহত সোনিয়ার মামা পুলিশের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের মুক্তির কারন কী? প্রতিউত্তরে বলা হয় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনার পর সন্তুষ্টজনক উত্তর পাওয়ায় আটকে রাখায় আইনগত কোনো দিক ছিলোনা(!)
হাকিম আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল বানী’কে জানান, প্রথমে সোনিয়ার মৃত্যুকে আত্মহত্যা ভেবে ইউডি মামলাগ্রহন করা হয়েছিল। কিন্তু ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ দাফনপূর্বক গোসলের সময় সোনিয়ার দেহের দুটি অংশে দাগ দেখতে পাওয়া এবং ঘটনার দিন শান্ত ও নাহিদ ঐ বাড়িতে রহস্যময় উপস্থিতিতে ধারনা প্রবল হয় যে, দীর্ঘ প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় তাকে হত্যা করে ঘটনা ভিন্ন দিকে রূপ দিতে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় ব‌লে ধারণা করা হ‌চ্ছে। তাছাড়া নিহতের বাবা আজহার খা জানান, তিনি সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মাঠ থেকে গরু আনতে যাওয়ার সময় ঐ দুই কিশোরকে বাড়ির আঙিনায় দেখে তাদের উপস্থিতির কারন জিজ্ঞাসাবাদ করলে সোনিয়ার কাছে পড়ালেখার বিষয় নিয়ে তাদের আগমন বলে দাবী করে। গরু নিয়ে ফিরে এসে দেখেন অন্ধকার ঘরে নিজ কক্ষে সোনিয়ার ঝূলন্ত লাশ।
এরপরই নিহতের পরিবার হত্যা প্ররোচনার দাবী তুলে মামলা দিতে থানায় ঘুরতে থাকে। পুলিশ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্ররোচনাকারী হিসেবে শান্ত ও নাহিদকে আটকে সহায়তা করতে পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী নিহতের মামা হাকিম শান্ত’র পিছু নিয়ে জানতে পারে সে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। এমন খবরের ভিক্তিতে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এসআই দীপায়ন বড়াল নিহত সোনিয়ার মামাকে সাথে নিয়ে কাগাশুরা গ্রামে অভিযান চালায়। সেখানকার হাজী বাড়ি বাজার থেকে অনতিদূরে শেখ বাড়ি থেকে কামাল শেখের পুত্র শান্তকে আটক করে নিয়ে আসে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রাক্কালে নাহিদকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপরে পুলিশের ভূমিকা পাল্টে যায়। এখন পুলিশ বলছে, এই কিশোরদ্বয়ের পক্ষে সোনিয়াকে হত্যা অথবা প্ররোচনার মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার মতো এদের বুদ্ধিমত্তা নেই। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেনো পুলিশ হত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে উল্লেখিত দুই কিশোরকে আটকে সহায়তা চেয়েছিলো? মূলত এধরনের ঘটনায় হত্যা প্ররোচনার মামলার কথা থাকলেও থানা পুলিশ নিহতের পরিবারের প্রথম থেকেই উপেক্ষা করে আসছে। ঘটনার প্রেক্ষাপটে এখন চারিদিকে কথা উঠেছে , কি‌শোরদ্ব‌য়ের মু‌ক্তি সোনিয়ার মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে।
উপরন্তু এসআই দীপায়ন বড়াল এখন ঐ দুই কিশোরের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় রহস্য আরও জোরালো রূপ নিয়েছে। চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা গ্রামের একটি সূত্র জানায় , শান্ত’র পরিবারের পক্ষ থেকেই অসতর্কতাবশত বলা হয়েছিলো, ঝুট-ঝামেলা মাটি দি‌তে ৬০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কে এই টাকা গ্রহন করেন তা উচ্চ পর্যা‌য়ে তদন্ত করলেই বে‌রি‌য়ে আস‌বে।
এসআই বড়ালের সাথে আজ শনিবার সকালে এই অভিযোগ সত্য না গুজব তা জানতে বরিশাল পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদক সেলফোনে আলোচনায় প্রশ্ন রাখা মাত্র তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে কিছু মন্তব্য করে।একপর্যায়ে তিনি ফোন কেটে দেন।। এ তথ্যের সত্যতা তিনি পেয়েছেন কিন্তু উত্যক্ত করার ন্যায় এমন কোনো ঘটনা অতীতে ঘটেনি। যা থেকে বিরোধ বা লাজ-লজ্জায় সোনিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই বিষয়টি নিয়ে যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন থানার ওসি জাহিদ বিন আলম। এক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আত্মহত্যায় যদি প্ররোচিত করা হয় ময়নাতদন্তে তার কী আলামত বহন করবে? প্রতিউত্তরে তিনি যে ব্যাখ্যা দেন তার সারকথা হচ্ছে, পুলিশের চোখ এড়ানো সম্ভব হবেনা ঘটনা যদি সত্যি হয়। তাহলে প্ররোচনাকারী হিসেবে ঐ দুই কিশোরকে আটকের নামে ডেকে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে চাইলে প্রতি উত্তর হচ্ছে, আটক নয়, ঘটনার দিন তাদের সাড়শি গ্রামে সোনিয়ার বাড়িতে উপস্থিতির কারন জানতেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো। কিশোর শান্ত স্বীকার করেছে সোনিয়ার সেলফোন নাম্বার সংগ্রহে ঐদিনই প্রথম তাদের বাড়িতে যায় এবং অদূরে দাঁিড়য়ে ছিলো নাহিদ।
সোনিয়ার মৃত্যুর খবর পরবর্তী উভয় কেনো আত্মগোপনে গেলো সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
তার ধারনা , তৃতীয় কোনো গোষ্ঠী সোনিয়ার মৃত্যু নিয়ে পুলিশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পাখি শিকারের ন্যায় শত্রুতা উদ্ধারে এই ঘটনা হত্যায় রূপ দিতে চাইছে। তার সন্দেহ সেই গোষ্ঠীই সম্ভবত শান্ত’র পরিবারের কাছ থেকে অর্থ গ্রহনের অভিযোগ তুলে পুলিশকে বিতর্কে ফেলে একটি ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে। এই পুলিশ কর্তার সন্দেহ তারই আলোকে শান্তকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে শুক্রবার মানববন্ধন কর্মসূচি ডাকা হয়েছিলো। গত শুক্রবার বেলা ২টার দিকে সারসী গ্রামে এ মানববন্ধনে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে বলে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। অবশ্য শান্ত’র পরিবারও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি এখন স্থানীয়দের কাছে অস্বীকার করছে ।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

ফেসবুক কর্নার

শিরোনাম
আন্দোলনের নামে অরাজকতার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বরিশালে শ্রমিকদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পারাজাপুরে একই সময়ে বিএনপি ও যুবদলের দুই গ্রুপবরখাস্ত হচ্ছেন নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কহাসপাতাল ছাড়লেন জামায়াত আমিরপ্রাথমিকে আসছে বড় নিয়োগ, নেওয়া হবে ১৭ হাজার শিহাসিনার পক্ষে মামলায় লড়তে জেড আই খান পান্নার টনক নড়েছে শেবাচিম কর্তৃপক্ষের / একসংগে ৪৬ ট্রসাত মাসে ২৫৯ শিশু খুন, নির্যাতনও বাড়ছের‍্যাংকিংয়ে ফের দশে নেমে গেল বাংলাদেশ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল ইসলামী আন্দোলজনগণ যেভাবে চাইবে, দেশ সেভাবেই পরিচালিত হবে: তআমি ইউনূস-হাসিনা দ্বন্দ্বের বলি: টিউলিপফিরছে ‘না’ ভোট