বরিশাল ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার বামনা উপজেলার ১৬ নং পূর্ব সফিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত করলেও রাতের আঁধারে সেই কমিটি পরিবর্তন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১৯ আগষ্ট) দুপুরে বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য মো. মালেক হাওলাদার বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি জানান, গত ১৭ আগষ্ট বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে ১০ জন নির্বাচিত সদস্যদের উপস্থিতিতে সর্ব সম্মতি ক্রমে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় বেগম ফায়জুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. হাবিবুর রহমানকে। সভা শেষ হতে রাত হওয়ায় ওই দিন উপস্থিত সকলের সাদা রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেয় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আ. মালেক গাজি ও বামনা উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। আমরাও সে খাতায় সরলমনে স্বাক্ষর দেই। পরের দিন সকাল থেকে শুরু হয় এদের দুজনের ষড়যন্ত্র। গত মঙ্গলবার রাতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক দুজনে মিলে সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে তাদের আজ্ঞাবহ আসমাতুন্নেসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে সভাপতি পদে নির্বাচিত উল্লেখ করে রেজুলেশনে লিপিবদ্ধ করেন। সেই
কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায়। এ ঘটনায় বামনা উপজেলা ব্যাপী চাঞ্জল্য সৃষ্টি করেছেন বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো জানান, আমাদের নির্বাচিত সভাপতি হাবিবুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এছাড়াও তিনি একটি সনামধন্য পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন স্থানীয় এমপিও সাবেক সভাপতির মনের মতোন কমিটি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা মিলে এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সভাপতি পদে গোপনে নতুন করে অন্য একজনকে সভাপতি করা হয়েছে।
এ ব্যপারে কথা হয় ওই বিদ্যালয়ের আরেক অভিভাবক সদস্য মোসা. লাইজু আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের সকলের সিদ্ধান্তে হাবিবুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করি। তবে ভোটের দিন আমাদের একটি রেজুলেশন বইতে উপস্থিতির স্বাক্ষর নেয়। পরের দিন গত মঙ্গলবার রাতে বিদ্যালয়ের পিয়নকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক আমার কাছে একটি রেজুলেশন খাতা পাঠায়। সেখানে আমি জানতে পারি সভাপতি অন্য আরেকজনকে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে প্রধান শিক্ষক সাবেক সভাপতির চাপে আমি সেখানে স্বাক্ষর দেই। সদস্যদের সিদ্ধান্তে নির্বাচিত প্রথম সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি অভিভাবকদের ভোটে ওই স্কুলের নির্বাচিত একজন অভিভাবক সদস্য। অন্য নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে গত ১৭ তারিখে সিলেকশনে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। তবে কি অপরাধে আমাকে ওই পদ থেকে রাতের আঁধারে সরিয়ে অন্য একজনকে পদটি দেওয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমি একটি বিষয় স্পস্ট বুঝতে পেরেছি আমিএকজন প্রভাষক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাবেক চেয়ারম্যানের সন্তান হওয়ায় আমাকে সরানো হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. মালেক গাজী বলেন, দুইজন সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনের দিন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পরের দিন সকলের সিদ্ধান্তে মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমরা রেজুলেশনের কোন পাতা ছিড়ে জালিয়াতি করিনি। সাদা রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন সদস্যের কাছ থেকে সাদা রেজুলেশনেও স্বাক্ষর নেইনি।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত বামনা উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবোনা। সিদ্ধান্ত হওয়ার পূর্বেই আমি সেখান থেকে চলে আসছি। এ ব্যপারে প্রধান শিক্ষকই বলতে পারবেন। বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, বুধবার সকালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার কাছে একটি রেজুলেশন জমাদিয়েছেন। সেখানে হাবিবুর রহমানসহ ৯জন সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে। একই দিন আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যপারে তদন্তকরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।