বরিশাল ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
জালাল আহমেদ, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ কোনভাবেই পানি বন্দীদশা কাটছেনা পটুয়াখালী জেলা শহরসহ সদর উপজেলা, কলাপাড়া, রাংগাবালী, দুমকী, মির্জাগঞ্জ ও বাউফল উপজেলার এলাকার বেরিবাঁধ ভাংগন কবলিত এলাকার মানুষের। অবিরাম বৃষ্টি ও অমাবস্যা জো’ এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহরসহ অন্তত ৫০টি গ্রাম। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার পানিতে তলিয়ে গেছে বেরিবাঁধের বাইরের সকল নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চল। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে এসব এলাকার হাজারো পরিবারের বসতবাড়ি, পুকুর, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ফসলি জমি। পানি বন্দীদশা না কাটায় অধিকাংশের রান্না চলে আলগা চুলায়। রান্না করতে না পারায় অনেকের দিন চলে অর্ধাহারে-অনাহারে।
কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা লালুয়ার রাবনাবাদ নদের পাড়ের ১১ গ্রামের শত শত পরিবার রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। ভাঁটার সময় অন্যসব গ্রামের পানি নামলেও এখানকার চারিপাড়া গ্রামের পানি সম্পুর্ণ না নামায় চার’শ পরিবার রয়েছে চরম দুর্ভোগে। চারিপাড়া এলাকার পারভেজ, ফিরোজ জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে প্রতি বছর অমাবস্যা ও পুর্ণিমার জোঁ এর সময় টানা ৫-৭ দিনের দুর্ভোগ থাকছে এসব এলাকার মানুষ। সম্প্রতি বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জোয়ারের মতো এতো পানি সিডরের পর তারা কখনো দেখেননি। সাবেক ইউপি সদস্য মজিবর হাওলাদার জানান, বাড়িঘরে থাকার পরিবেশ নাই। সবসময় পানিবন্দী থাকছে গ্রামের মানুষ। জোয়ারের সময় শত শত পরিবার চৌকির ওপরে বসে দিন পাড় করছে। রান্নাও করতে হচ্ছে চৌকির উপড়। চলাচল করতে হয় নৌকায়।
এদিকে সদ্য নির্মিত কলাপাড়ার নিজামপুর বেরিবাঁধের কয়েকটি পয়েন্টে ভাংগন শুরু হওয়ায় সেখানকার চারটি গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আবার পানিবন্ধী হওয়ার শংকা। এছাড়াও দুমকি উপজেলার লেবুখালী, মুরাদিয়া ইউনিয়নের অন্তত: ৫টি গ্রাম, বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন, রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা গ্রাম প্লাবিত হয়। রাতেও জোয়ারের পানি বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে।
অপরদিকে শহর রক্ষা বঁাধ অতিক্রম করে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহরের পুরান বাজার, চরপাড়া, কলেজ রোড, সদর রোড, নাবাব পাড়া, শিমূলবাগ, এসডিও রোড, সরকারী মহিলা কলেজ রোড, জুবিলী স্কুল রোড, নিউমার্কেট, নতুনবাজারসহ শহরের অধিকাংশ সড়কসহ এলাকা। এসব এলাকার মানুষের চলাচলের ভোগান্তিসহ মাটির চুলা নস্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকেই রান্নার অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পাড় করছে। পায়রা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী ফেরীঘাটে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
অতি উচ্চ জোয়ারসহ প্রচন্ড ঢেউয়ের তান্ডবে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক ভাসমান দোকান, ঝিনুক মার্কেট, শুটকী মার্কেটসহ আবসিক হোটেল কিংস। কুয়াকাট ইকোপার্কসহ সাগর পাড়ের অন্তত: সহস্রাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। যেকোন মুহুর্তে ভেংগে পড়ার শংকা দেখা দিয়েছে কুয়াকাট পর্যটন পার্ক, কুয়কাটা কেন্দ্রীয় ঘাটলা মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ অন্তত: ১২টি আবাসিক হোটেল ও মার্কেট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান জানান, লালুয়ার রাবনাবাদ পাড়ের বিষয়টি উর্ধতন কতর্ৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনা পাশ হলে দ্রুত কাজ করা হবে। নিজামপুর ভাংগন এলাকা পরিদর্শন করে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা হচ্ছে। অবিরাম বৃষ্টি এবং অমবশ্যার জোঁ এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জেয়ারের পানিতে সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে মানুষ। #