বরিশাল ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বরিশাল বিএনপিতে এবার শ্রমিক দল নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার তার বাসভবনে বসে পছন্দের কর্মী নিয়ে জেলা শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এমন একজনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যিনি ৭নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং যার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরোয়ার এ অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, যারা সক্রিয় তাদেরকে নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি। কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তার কাছে যে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে তিনি সেটি অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন বা নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। এদিকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কমিটি গঠনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বরিশাল জেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের।
আব্দুল কাদের তার অভিযোগে জানান, তিনি জেলা শ্রমিক দলের ৪নং সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক। গতমাসে (ডিসেম্বর ২০২১) বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ারের বাসভাবনে বসে কয়েকজন তার অনুসারী নিয়ে জেলা শ্রমিক দলের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম বশির আহমেদের স্থলে ৭নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যা শ্রমিক দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। তিনি নিজেকে ত্যাগী ও নির্যাতন, হামলা, মামলার শিকার বলে ওই অভিযোগপত্রে দাবি করেন। এদিকে আরও একটি অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে যাকে জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই সাইফুল ইসলাম বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী। তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দুটি নারী কেলেঙ্কারি অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে একটিতে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এমন একজনকে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া দলের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বরিশালে সভা করে যাকে সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাকেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা আমি জানি না। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, দীর্ঘদিন পর্যন্ত জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পদটি শূন্য থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। তাই তিনি সভা করে এ কমিটি পূর্ণ গঠনের আহ্বান জানান। সভায় উপস্থিত সব উপজেলা কমিটি সাইফুলের নাম প্রস্তাব করে। যিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দলের কোনো সভা সমাবেশে পাওয়া যায়নি। সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই তিনি শ্রমিক দলের শূন্যপদগুলো পূরণ করে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছেন। কেন্দ্র অনুমোদন দিয়েছে। সাইফুলের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে সরোয়ার বলেন, তিনি শুনেছেন, তার দলের এক নারী কর্মীকে সাইফুল বিয়ে করেছিল। এটি নিয়ে সমস্যা হয়। পরে তা মিটমাট হয়ে গেছে। তবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাইফুল বিবাহিত। ১ম স্ত্রীকে না জানিয়ে তিনি নারী কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যান। এর আগে শিক্ষা বোর্ডের এক নারী সহকর্মীর সঙ্গেও গোপনে তিনি বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে মহানগর কমিটি থেকে সরোয়ারকে বাদ দিয়ে মনিরুজ্জামান ফারুককে সভাপতি করা হয়। এ নিয়ে বরিশাল বিএনপি সুস্পষ্ট দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। ঠিক এ মুহূর্তে শ্রমিক দল নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ বিভক্তির অবনতি ঘটবে বলে বিএনপি’র সাধারণ সদস্যদের অভিমত।