বরিশাল ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
দি বরিশাল ডেস্ক।। মাত্র একদিন পর শুরু হচ্ছে নতুন বছর, সঙ্গে নতুন শিক্ষাবর্ষ। প্রতি বছরের মতো এবারো ১ জানুয়ারি উদযাপিত হবে বই উৎসব। এদিন সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করবে সরকার। তবে বরিশালে বই উৎসব ঘিরে খানিকটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা এখনো ৭৫ ভাগ বই পৌঁছেনি বরিশালে। তাই অনেক শিক্ষার্থীকেই এদিন খালি হাতে ফিরতে হতে পারে। বিশেষ করে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের চাহিদার ১০ ভাগও এসে পৌঁছেনি। মাধ্যমিক স্তরের অবস্থাও একই। তাদের চাহিদামাফিক অর্ধেক বইও আসেনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, ৫০ ভাগ বই-ই এসে গেছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বইয়ের সেট না দিতে পারলেও বই উৎসব হবে। এদিকে বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ছয় জেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এসব ছাত্রছাত্রীর জন্য বরিশাল বিভাগে মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেয়া হয়েছে ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩১টি। এছাড়া ৮ হাজার ৮২৩টি ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের চাহিদা রয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে এখন বিভিন্ন শ্রেণী কিংবা বিষয়ের বই চাহিদা অনুযায়ী এসে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এমনকি এখনো বই না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল সদরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষার উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘কোনো উদ্বেগের কারণ নেই, এরই মধ্যে গোটা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের মতো বই এসে পৌঁছেছে। বাকি বইগুলো পথে ও গাড়িতে রয়েছে। আশা করছি ১ জানুয়ারির আগেই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই পেয়ে যাবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে বিদ্যালয়গুলো বই উৎসব পালন করবে।’ তবে কোনো কোনো বিষয়ের বই পেতে দেরি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই উৎসবের দিনে সব বিষয়ের বই পাবে না, তারাও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই সেসব বই হাতে পেয়ে যাবে। আমি প্রতিনিয়ত ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বই না পাওয়ার শঙ্কার কোনো কারণ দেখছি না।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের ২ হাজার ৭৫১টি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা হবে। এ হিসেবে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৫০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এসব ছাত্রছাত্রীর জন্য মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩টি। এছাড়া দাখিল, ইবতেদায়ি, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও কারিগরি ট্রেডে আরো ৬৮ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ‘প্রাক-প্রাথমিকের সব নতুন বই পেয়েছেন। প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বইও অনেক এসে গেছে। তবে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের বিষয়ে আমার জানা নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের মান খারাপ হওয়ায় সে বই বাতিল করা হয়েছে। এখন অন্য প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার কারণে এ তিন ক্লাসের বই বরিশালে এসে পৌঁছেনি। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, এ তিন ক্লাসের ১০ ভাগ বই এসে পৌঁছেছে।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, ‘কিছু কিছু শ্রেণীর বই আসছে। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণীর কোনো কোনো বিষয়ের নতুন বই পৌঁছেছে, বাকিগুলোও পৌঁছে যাবে।’
এ বিষয়ে বরিশাল অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বই উৎসবের আয়োজনও চলছে, কোনো ব্যাঘাত ঘটার কারণ দেখছি না।
যদিও জেলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ পর্যন্ত যে বই হাতে পেয়েছেন তা দিয়ে শত ভাগ বিদ্যালয় বই বিতরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
সূত্র: বণিক বার্তা