বরিশাল ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরের বাংলাদেশও একাত্তর পূর্বের মতোই শ্মশান রয়ে গেছে। ২০২৩ এসেও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যায়। দেশের সম্পদ বানের ঢলের মতো বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলন ২০২৩ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যের বীভৎস দৃশ্যে মানবতা লজ্জা পায়। কেউ কেউ কোটি টাকার গাড়ি কেনে আর কোটি মানুষ একমুঠো ভাতের জন্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌড়ায়। মানুষের ভোটাধিকার শুধু কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, বরং ভোটের অধিকার চাওয়াকেই অপরাধ বানানো হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গোটা দেশকেই জেলখানা বানানো হয়েছে। বিরোধী মতকে দমন করা, গুম করা, রাজনৈতিক সমাবেশেগুলো করে মানুষ মারা ক্ষমতাসীনদের নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। ’
‘সার্বিক বিচারে দেশ যেন সেই ৭১-পূর্ব পরাধীনতার বৃত্তেই আটকে আছে’ উল্লেখ করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘এতগুলো বছর পরে এসে এসব দেখে খুব কষ্ট হয়। কোটি মানুষের রক্তকে এভাবে বিফলে যেতে দেখে রক্ত আন্দোলিত হয়। জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে এভাবে পরাধীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে দেখে আর সহ্য করা যায় না। ’
জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ সৈয়দ ইবরাহীম বীর প্রতীক, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীসহ আরো অনেকে।
সম্মেলন ঘোষণা করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। তিনি ১৯ দফা সম্মেলন প্রস্তাবনা ঘোষণা করেন। জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও দাওয়াহ্ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম ও মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন।
সম্মেলনে ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৭৩ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ, ২২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলন থেকে ১৫ দফা উপস্থাপন করেন দলের আমির। দফাগুলো হলো―যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশে মদ ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে, শিক্ষা সিলেবাস-উপকরণ থেকে ইসলাম অসমর্থিত সব তত্ত্ব, বক্তব্য, ধারণা (Concept) ও ছবি বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সব মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, রেডিও, টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
বাকি দফাগুলো হলো―রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (P.R) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে এবং আশু সমাধান হিসেবে বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে। নাগরিকদের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। দেশি-বিদেশি কোনো অজুহাতেই মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।